শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ৬ লাখ মুসল্লি সমাগমের আশা
Published: 29th, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে এবার প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হতে পারে বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলেনে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাব। ঈদগাহ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নায়মুল হাসান ও কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতির তথ্য জানান।
এ সময় তাঁরা বলেন, এবারের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১১শ’ পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্য, পর্যাপ্ত র্যাব, আনসার-ভিডিপি ছাড়াও ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিজ নিজ বাহিনীর পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ঈদগায় ৬টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন। বসানো হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে হবে। কেবলমাত্র জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস, ব্যাগ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে পরের বছর থেকেই নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। মুসল্লিদের ওজু ও পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের আগের দিন দূরবর্তী যেসব মুসল্লি আসবেন, আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মসজিদে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের দিন দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দু’টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে বেলা ১২টায় দু’টি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, র্যাবের কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আশরাফুল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মুকিত সরকার, ঈদগাহ কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র জ ম ত ক শ রগঞ জ ব যবস থ ঈদগ হ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ