২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের উন্নয়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতিপ্রকৃতি ও অর্থনৈতিক নীতিমালা পর্যালোচনা করে থাকে।

ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা খাতের উন্নয়ন নিয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে সরকারের শিক্ষাব্যয় ২০৪৮ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন রয়েছে। খবর ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের

প্রতিষ্ঠানটির নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ বেশ জোর দিয়েই বলেছে, মানবপুঁজি উন্নয়নকে সমর্থন করে—এমন একটি সুপরিকল্পিত রাজস্ব কৌশল প্রয়োজন, যা আর্থিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির চলতি মার্চ সংস্করণে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ সমাপ্য অর্থবছরে ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৫–২৬ অর্থবছরে খানিক বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে ওই হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ভারতের রাজস্ব নীতি পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে বিকশিত ভারত অভিযাত্রা সফল করে তোলা যায়।

গত মাসে জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (এনএসও) সংশোধিত প্রাক্কলনে ২০২৩ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক অক্টোবর–ডিসেম্বরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমক ২ শতাংশ হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই হার চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা জানুয়ারি–মার্চে আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচ। তবে আগামীকাল সোমবার শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (এনএসও) বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইওয়াই ইকোনমি ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি পর্যায়ের চূড়ান্ত ভোগব্যয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবশ্য ভারতের অর্থনীতিতে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর কখনো দেখা যায়নি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংও ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, ২০২৫-২৬ আর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র শ প রব দ ধ ২০২৫ ২৬

এছাড়াও পড়ুন:

তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের দিনমজুর পারভিন আক্তার (৪৭)। তিনি এই বাজারে আলুর একটি আড়তে কাজ করেন। বসে বসে আলু বাছাই করা তাঁর কাজ। প্রতিদিন পান ৬০০ টাকা। সংসারে অসুস্থ স্বামী। তবে তিনি মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। স্বামীর আয় নিয়মিত নয়। তাঁদের মেয়ে ও এক ছেলে সঙ্গে থাকে। মেয়েটির আবার দুটি সন্তান আছে। পুরো পরিবারটি পারভিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

গত এপ্রিল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিজে অন্তত দুই বার এবং মেয়ে ও তাঁর ছেলেটি তিন বার করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পারভিন কাজে গেলে টাকা পান, না গেলে নেই। এভাবে অসুখের কারণে এ বছর ১১ দিন কাজে যেতে পারেননি, স্মরণ করে বলেন পারভিন। কারওয়ানবাজারে কাজের যে পরিবেশ, সেখানে গরমে ঘামতে হয়। কয়েক বছর ধরে গরমটা অসহনীয় বলে মনে হয় তাঁর কাছে।

পারভিন বলছিলেন, ‘ঘাম শরীরে বইসা অসুখ বাধায়। গরম এত বাড়ছে যে কওনের কথা নাই।’

পারভিনের মতো এমন অসংখ্য মানুষের এভাবেই গরমের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। এই তো গত বছরেই (২০২৪) ২১ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম ‘অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ।’ এতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সঙ্গে আছে ২০২৪ সালে করা একটি বড় জরিপ, যেখানে দুই ধাপে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়।

১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১°ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ সময় গরমের অনুভূতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৫°ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সময়ে ঢাকার গরম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার গরম জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘ কাশি, শ্বাসকষ্ট আর প্রচণ্ড অবসাদ—এসব রোগ বেড়েছে।

অধ্যাপক আবদুস সালাম তাঁর একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দূষণের সম্পর্ক আছে। তিনি বলছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কয়েকটি ক্ষতিকর গ্যাস। এর মধ্যে আছে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই–অক্সাইড ও মিথেন।

গরমের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ২০২৪ সালে গরমের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কর্মদিবস (আড়াই কোটি দিন) নষ্ট হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার এবং প্রতিবেদনের সহলেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে সরাসরি উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও ঘটছে। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর বাস্তব ঝুঁকির মুখে।’

আরও পড়ুনতাপমাত্রা এত বাড়ছে কেন?২১ এপ্রিল ২০২৪প্রখর রোদে ছাতা মাথায় মাঠের মধ্যে ধান শুকাচ্ছেন এক গৃহবধূ। কাইমউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, নর্থ চ্যানেল, ফরিদপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, জেনে নিন সময়
  • বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিলো ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স
  • দক্ষিণ সিটির রাজস্ব আদায়ে ধস, আন্দোলনের ক্ষত এখনো কাটেনি
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে