জাপানি ‘নিওহো’ জাতের স্ট্রবেরির সঙ্গে আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরির সংকরায়ণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাপানি জাতটি খুবই ছোট কিন্তু সুগন্ধি ও মিষ্টি। আমেরিকান জাতটি আকারে বড় কিন্তু জাপানি জাতের মতো অতটা মিষ্টি নয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন ১০ বছরের চেষ্টায় এই নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। চারা উৎপাদন, নির্বাচন, ট্রায়াল চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাই করতে করতে তিনি ২০২৪ সালে এসে সফল হয়েছেন। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে জাতটির নাম রেখেছেন ফ্রিডম-২৪।

শীতপ্রধান দেশের আকর্ষণীয় ফল স্ট্রবেরির বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে শুরু হয় ২০০৭ সালে। নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এ দেশে স্ট্রবেরি চাষ একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে নিয়েছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষ চাষিরা সফলভাবে স্ট্রবেরি চাষ করছেন, যা উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে লাভজনক কৃষিতে জায়গা করে নিয়েছে। মানসম্মত চারা ও আধুনিক জাতের স্ট্রবেরির স্বল্পতার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে এর চাষ সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।

রাজশাহীতে অবস্থিত আকাফুজি অ্যাগ্রো টেকনোলজিস গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে স্ট্রবেরির এই আধুনিক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই জাত আগাম এবং উচ্চফলনশীল, আকারে বড়, দেখতে অনিন্দ্যসুন্দর, সুগন্ধযুক্ত, সুমিষ্ট ব্রিক্স-১২ (মিষ্টতা পরিমাপের একক)। মধ্য ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চের শেষ পর্যন্ত এই ফল উৎপাদন করা যায়। এই ফল যথেষ্ট শক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন ও বিপণন করা সম্ভব। সংকরায়িত অতি ক্ষুদ্র হাইব্রিড বীজ থেকে চারা উৎপাদন, নির্বাচন, ট্রায়াল চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাইকরণ এবং সবশেষে বাণিজ্যিকভাবে চাষ উপযোগিতা পরীক্ষায় লেগেছে ১০ বছর।

গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, এই জাতের চারা রোপণের সময় অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর। ফল উৎপাদন শুরু হয় ডিসেম্বর ১৫ থেকে ২০ থেকে। ফল উৎপাদনকাল ১৫ ডিসেম্বর থেকে মার্চ ৩১। ফলের রং ও আকার উজ্জ্বল লাল, গড় ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম। প্রতি বিঘার ফলন হিসাব করা হয়েছে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ টন। সংরক্ষণ সময় ৩ দিন (বিশেষ ব্যবস্থায় ৭ দিন), মিষ্টতার পরিমাণ ১২-১৪ ব্রিক্স। গাছের আকৃতি পাতা, বৃতি এবং ফুল—সবই বড়।

এম মনজুর হোসেন জানান, এই স্ট্রবেরি একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে এই স্ট্রবেরি আমদানির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাসকাটাদিঘি এলাকার স্ট্রবেরিচাষি ও ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাত চলে। নতুন এই জাতটি আকারে ফেস্টিভ্যালের চেয়ে অনেক বড়।’ আগামীবার তিনি এই জাত চাষ করবেন।

বাংলাদেশে মাত্র পাঁচটি ফসলের বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এই ফসলগুলো হচ্ছে ধান, পাট, গম, ভুট্টা ও আলু। অন্য ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করলে তা স্বীকৃতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আর স্ট্রবেরি দেশীয় ফসল নয়। ২০০৭ সালে অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন বাংলাদেশে প্রথম চাষের উপযোগী স্ট্রবেরি জাত উদ্ভাবন করেন। এবার রাজশাহী নগরের চকপাড়া মহল্লায় ১২ কাঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। নগদে বিক্রি করেছেন ৬ লাখ টাকার বেশি। এখনো তাঁর মাঠে স্ট্রবেরি রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ট রব র র র স ট রব র কর ছ ন এই জ ত

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে