পিআইও কার্যালয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণের পর মদন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতিকে অব্যাহতি
Published: 31st, March 2025 GMT
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নেত্রকোনার মদন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এস এইচ পিপুল আহমেদকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পিপুল আহমেদ সম্প্রতি মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ে গিয়ে এক কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। চেয়ার–টেবিল তছনছ করেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গেরও কিছু অভিযোগ রয়েছে। এসব বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ মার্চ ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো.
নোটিশে বলা হয়, দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন পিপুল আহমেদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ২১ মার্চ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জবাব দিয়েছিলেন পিপুল আহমেদ। কিন্তু তাঁর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় রোববার তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মদন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এস এইচ পিপুল আহমেদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক না রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপলু আহমেদ বলেন, ‘আমি যড়ষন্ত্রের শিকার। যেসব অভিযোগে আমাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। তবুও সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিগত সময়ে আমি আন্দোলন–সংগ্রাম করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ২২টি রাজনৈতিক মামলার আসামি করা হয়েছে। নয়বার জেল কেটেছি। তবে আমি আমার মানবিক কাজগুলো চালিয়ে যাব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স প প ল আহম দ মদন উপজ ল স গঠন র দল র স
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’
অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’