রাজবাড়ীতে এক গৃহবধূকে (২৫) আটক করে অপহরণ, ধর্ষণচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিমাদ্রি হাওলাদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন। বিচারক শেখ মফিজুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরেক আসামি হলেন পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামের এতেম শেখের ছেলে আরিফ হোসেন।

তবে পাংশা থানার ওসির দাবি, মামলার বাদী গৃহবধূ ও তাঁর স্বামী একটি অপহরণ মামলার নিয়মিত আসামি। ওই গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।

গৃহবধূর করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নির্দেশে এসআই হিমাদ্রি হাওলাদার ও সহযোগী আরিফ হোসেন ওই গৃহবধূর বাড়িতে প্রবেশ করেন। এ সময় এসআই হিমাদ্রি ও সহযোগী আরিফ হোসেন ওই গৃহবধূর বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে তাঁর স্বামীকে খোঁজার অজুহাতে তল্লাশি চালান। একপর্যায়ে গৃহবধূর স্বামীকে না পেয়ে তাঁরা গৃহবধূকে জাপটে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁরা ওই গৃহবধূকে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করার সময় তিনি ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ সময় তাঁরা জানান, ওসির নির্দেশে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পরে তাঁকে থানায় এনে শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, স্বজনসহ সাক্ষীরা ওই গৃহবধূকে ছাড়িয়ে আনার জন্য থানায় গেলে ওসি, এসআই ও সহযোগী আরিফ তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে এসআই হিমাদ্রি ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে গৃহবধূকে ছেড়ে দেন। তবে দাবি করা মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জাহিদ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক গৃহবধূর করা মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, উপজেলার মাছপাড়ার এক কিশোরী (১৭) অপহরণের ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলার ৩ নম্বর আসামি ওই নারীর স্বামী এবং ৫ নম্বর আসামি ওই নারী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই হিমাদ্রি হাওলাদার। ওসি বলেন, তদন্তে জানতে পারেন অপহৃত কিশোরী ওই নারীর কাছে আছে। ৩ এপ্রিল রাতে অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে আটক করে থানায় আনার পর ছাড়িয়ে নিতে নানা স্থান থেকে ফোন করা হয়। তাঁদের কথামতো পরদিন ৪ এপ্রিল কিশোরীকে এলাকায় দিয়ে তাঁদের জিম্মায় ওই গৃহবধূকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি থানা থেকে ছাড়া পেয়েই মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশকে হয়রানি করছেন। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন বলে জানান ওসি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসআই হ ম দ র গ হবধ র ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি