গাজীপুরে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ যাবতীয় বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে শ্রমিক সমাবেশ হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে নগরীর মোগরখাল এলাকায় টিএনজেড কারখানা–সংলগ্ন বালুর মাঠে টিএনজেড গ্রুপের তিনটি কারখানার শ্রমিকেরা ওই সমাবেশের আয়োজন করেন।

সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ঈদের আগে থেকেই তাঁরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে তাঁদের এ শ্রমিক সমাবেশ।

আরও পড়ুন২৩ দিন পর কাজে ফিরেছেন গাজীপুরের টিএনজেড কারখানার শ্রমিকেরা১৬ নভেম্বর ২০২৪

বক্তারা বলেন, গত ২৩ মার্চ থেকে তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ যাবতীয় বকেয়ার দাবিতে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিসহ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। এ কর্মসূচির আলোকে ২৯ মার্চ শ্রমসচিবের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় (শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ ও সরকারপক্ষ) বৈঠক হয়।

বৈঠকে শ্রমিক-কর্মচারীদের আনুমানিক পাওনা ১৮ কোটি টাকার মধ্যে ঈদের আগেই ৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটা ভঙ্গ করে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট বকেয়া পরিশোধের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার পুনরায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আশ্বাস দেন সচিব। একই সঙ্গে যত দিন বকেয়ার সমস্যা সমাধান হবে না, তত দিন টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শাহীনকে পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন সচিব।

বক্তারা বলেন, ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং সচিবের আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তাঁরা। এরপর ৭ এপ্রিল কারখানার সামনে শ্রমিক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রমিক–কর্মচারীদের কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া ন্যায্য পাওনা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তাঁরা।

কারখানার শ্রমিক শাহিন আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ছাত্রনেতা দিলীপ রায়, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা গাজীপুরের আহ্বায়ক আরমান হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, হারুন সরকার, মাসুদ রেজা, মীর তোফাজ্জল হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সত্যজিৎ বিশ্বাস, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল মীর, জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের নেতা শামীম ইমাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র ম ন টস ট এনজ ড

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ