সিলেটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন বাটার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোস্তাসিম বিল্লাহ। এতে অজ্ঞাতনামা ৮০০-৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বাটা কর্তৃপক্ষ মামলা করার পরপরই পুলিশ অভিযানে নামে। রাত ১১টার দিকে লুট করা দুই জোড়া বাটা জুতাসহ পুলিশ অভিযুক্ত দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান-রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। গত সোমবার বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এসব হামলা ও লুটপাট চলে। ১৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে নগরের বিভিন্ন এলাকার আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে বিচ্ছিন্নভাবে লুটপাট চালানোর অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ভুক্তভোগী তিনটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সকালে মীরবক্সটুলা এলাকার রয়্যাল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার তাঁদের হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুনসিলেটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা–ভাঙচুরের ঘটনায় আরেক মামলা, আসামি ৮০০১২ ঘণ্টা আগে

এ ছাড়া নগরের দরগাগেট এলাকার ডমিনোজ পিৎজায় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে একটি মামলা করেন। প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত সব মিলিয়ে পুলিশ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসিলেটে ফুটেজ দেখে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের খুঁজছে পুলিশ, গ্রেপ্তার ১৮০৮ এপ্রিল ২০২৫

কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে রয়েছে, তাই দোষীদের শনাক্ত করা গেছে। এখন অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ল টপ ট র ঘটন য় গতক ল নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে ৮ দল

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বহাল এবং নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ আন্দোলনরত আট দল।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরনো পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।

আরো পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর গণমিছিল সহকারে স্মারকলিপি প্রদান। এতে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আগামী ১১ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকায় গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিষয়গুলোর সুন্দর সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের।

এর আগে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আট দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মামুনুল হক বলেন, “বাংলাদেশ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তবে জুলাই সনদ নিয়ে দেশের মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল এবং নতুন বন্দোবস্তের স্বপ্ন এখনো অধরা।’’

পূর্ব ঘোষিত ৫ দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আমাদের আটটি দলের পাঁচ দফা দাবিতে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করতে হবে। আরপিও সংশোধন করা হলে আমরা সেটা মানব না। অর্থাৎ আরপিও আগের মতোই রাখতে হবে। এগুলোই এখন আমাদের মূল দাবি।

“আশা করি আলোচনার ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক দল সমাধান করতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হবে’’ বলেন তিনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন করে সেই আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘‘আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, তাতে হঠাৎ করে একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে আর পরে করে লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে কারও মনযোগ থাকবে না।’’

তাহের বলেন, “আমি গতকালকে (২ নভেম্বর) দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার আহ্বান করেছিলাম। আজকে উপদেষ্টা পরিষদও সেই রকম একটি আহ্বান দলগুলোর কাছে জানিয়েছে। আমরাও দেখতে চাই, মেইন স্টেক হোল্ডার দলগুলো এই আহ্বানে যেন সাড়া দেয়। তারাও যদি আমাদের মতো একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে।’’ 

জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ যে মনে করেছে, তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা আর কিছুই করবে না, দলগুলো মিলে করবে… তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এখানে একটা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমরা আশা করি।’’

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘‘জুলাই সনদের আইনিভিত্তি হলো প্রধান বিষয়। এটা না হলে এই সরকার, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সবকিছু আইনি প্রশ্নের মুখে পড়বে। ৫ আগস্টের পরে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। গণভোটের বিষয়ে সবাই একমতও হয়েছে। এখন গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা দুঃখজনক। এই ক্ষেত্রে বিএনপির আচরণের কোনো অর্থ আমি বুঝি না।’’ 

উপদেষ্টা পরিষদের আজকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সকল রাজনৈতিক দলের একত্রে বসে চলমান বিভেদ দূর করে শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরির আহ্বান জানান পীর সাহেব চরমোনাই।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুল হক ও মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব মো. কাজী নিজামুল হক নাঈম।
 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ