জমি নিজের দাবি করে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল
Published: 10th, April 2025 GMT
মির্জাপুরে বন্দ্য কাওয়ালজানি খাদেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মাটি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাত থেকে মাঠে মাটি ফেলতে শুরু করেছেন লোকমান হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ১৯০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে বিদ্যালয়টি। গ্রামের বোরহান উদ্দিন ও আজিজুল হক ১৬২ শতাংশ ও ওয়াজেদ আলী ২৮ শতাংশ জমি দেন। এর মধ্যে বোরহান উদ্দিন ও আজিজুল হক ১০৮ শতাংশ রেজিস্ট্রিমূলে এবং বাকি জমি মৌখিকভাবে দান করেন। এর মধ্যে গ্রামের আছর উদ্দিনের দুই ছেলে রকমান ও লোকমান হোসেনের ৪৩ শতাংশ আবাদি জমিও রয়েছে। রকমানের সাড়ে ২১ শতাংশ জমি বোরহান ও আজিজুল দলিলমূলে মালিক হয়ে বিদ্যালয়কে দান করেন। লোকমান হোসেন তাঁর জমি বিক্রি না করে তাঁর বাড়ির পাশে তখনকার মূল্যবান জমি বিনিময়ে বোরহান ও আজিজুল হকের পরিবারের কাছে দাবি করেন। সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামের লোকজন বিদ্যালয়ের স্বার্থে বোরহান ও আজিজুল হকের পরিবারকে বুঝিয়ে ওই জমি দেন। লোকমান হোসেন বিনিময়ে পাওয়া ওই জমি গ্রামের শহীদ মিয়া নামে এক কৃষকের কাছে ১০ হাজার টাকায় বন্ধক দেন। ৮ বছর পর ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে জমিটি দখলে নেন লোকমান হোসেন। ইতালিপ্রবাসী লোকমান হোসেন গত রমজান মাসে দেশে ফিরে বিদ্যালয়ের মাঠের জমি পরিমাপ করে খুঁটি পুঁতে জমিটি নিজের দাবি করেন। গত বুধবার রাতে বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট শুরু করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের নজরে এলে ক্ষোভ তৈরি হয়। মাটি ভরাটের প্রতিবাদে দুপুরে বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, মাঠ দখল হলে তাদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাবে। মাঠ দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
প্রাক্তন শিক্ষক আজিজ মিয়ার ভাষ্য, অনেক কষ্ট করে আবাদি জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুই যুগ আগে জমির মালিকরা ঠিকমতো আবাদ করেননি। বিনিময়ে জমি নিয়ে বিদ্যালয় হওয়ার পর পাকা রাস্তা হয়েছে। এখন জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জমির দাবিদার বের হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ জমি দাবি করেননি। সরকার চারতলা দুটি ভবন করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সামনের বিশাল মাঠও মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। এখন গ্রামের লোকমান হোসেন নামে এক ব্যক্তি মাঠের সামনে সাড়ে ২১ শতাংশ জমি নিজের দাবি করে মাটি ভরাট শুরু করেছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে মাঠটি রক্ষার দাবি জানান জাহাঙ্গীর হোসেন।
জমির দাবিদার ইতালিপ্রবাসী লোকমান হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাটের কথা জানতে চাইলে কল কেটে দেন। এর পর একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল ল কম ন হ স ন ম ঠ দখল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।”
চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।
২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা