অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
Published: 12th, April 2025 GMT
সুখী ও সুন্দর পরিবার গড়তে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আগে ধরে নেওয়া হতো নারী করবেন শুধু ঘরের কাজ। সে সময় এখন বদলেছে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, নারী এখন অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চালিকাশক্তি। পরিতাপের বিষয় হলো– যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবার টিকে থাকে, সমাজ এগিয়ে যায়; তারা বরাবরই পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ– সর্বত্র অবহেলার শিকার। ভোরের কুয়াশা জড়িয়ে শহর যখন থাকে গভীর ঘুমে, ঠিক তখন থেকে শুরু হয় কর্মজীবী নারীর জীবন-সংগ্রাম। সবার জন্য খাবার তৈরি, সন্তানের যত্ন নেওয়া, নিজের কাজের জন্য তৈরি হওয়া– সব সামলে ঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানো। অফিসের চাপে ক্লান্ত মা। ঘরে ফিরেও তাঁর শান্তি নেই। সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের খুঁটিনাটি, সবার যত্নআত্তি তাঁকেই করতে হয়। এ যেন এক চক্রাকার দায়িত্বের অমোঘ নিয়ম। ক্লান্ত হলেও মায়ের মুখে কোনো অভিযোগ নেই। সন্তান ও পরিবারে হাসিই যেন তার একমাত্র প্রাপ্তি। এখনও লিঙ্গবৈষম্য পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান। কর্মজীবী নারীর শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অসুবিধাগুলো নিয়ে এখনও বেশির ভাগ জায়গায় কোনো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ঋতুকালীন, মাতৃত্বকালীন বা মাতৃত্ব-পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। বেতনবৈষম্যও প্রবল।
এ তো গেল শহুরে কর্মজীবী নারীর গল্প। গ্রামীণ বা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর সংগ্রাম আরও তীব্র। দিনমজুরের কাজ, গৃহস্থালি, সন্তান লালনপালন– সবকিছু একাই সামলে নিতে হয় তাদের। অন্যদিকে, যারা কর্মজীবী নন, তাদের জীবন-সংগ্রাম আরও বেশি জটিল। কর্মজীবী নারীর যেমন কাজের ক্ষেত্র ধরে একটা পরিচয় থাকে, গৃহিণী নারীর ক্ষেত্রে তেমন থাকে না এবং তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও নেই, নেই কোনো ছুটি। অথচ গৃহস্থালি কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না বলে এগুলোকে মূল্যহীন বা অদৃশ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় সমাজে। অথচ তাদের অমূল্য শ্রমের বিনিময়ে যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে পরিবার বা সামাজিক কাঠামো। নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না হলেও কিছু গবেষণায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের (২০১৩) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহিণী নারী বিনা মূল্যে যেসব গৃহস্থালি কাজ করেন, সেগুলোর আনুমানিক মূল্য বছরে ২২৭.
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে উঠে এসেছে, কর্মজীবী নারী ঘরের কাজসহ পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি পরিশ্রম করেন। এ কাজের বেশির ভাগই থেকে যায় অদৃশ্য। এই গৃহস্থালি শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্যায়ন নেই, নেই সামাজিক স্বীকৃতি। সামাজিক রীতিনীতি, পরিবারের শর্ত, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ– সবকিছুর মাঝে তাকে টিকে থাকতে হয়। তবু নারীরা কাজ থামান না। কারণ তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে থমকে যাবে ঘরের, এমনকি সমাজেরও চাকা। এই সময়ে এসে যেহেতু আমরা একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখছি; তাই নারীর সমতা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করতে হলে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সর্বোপরি ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে একটি সুষম ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর
জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।
আরো পড়ুন:
মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ
মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।
১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।
কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।
পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল