সুখী ও সুন্দর পরিবার গড়তে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আগে ধরে নেওয়া হতো নারী করবেন শুধু ঘরের কাজ। সে সময় এখন বদলেছে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, নারী এখন অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চালিকাশক্তি। পরিতাপের বিষয় হলো– যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবার টিকে থাকে, সমাজ এগিয়ে যায়; তারা বরাবরই পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ– সর্বত্র অবহেলার শিকার। ভোরের কুয়াশা জড়িয়ে শহর যখন থাকে গভীর ঘুমে, ঠিক তখন থেকে শুরু হয় কর্মজীবী নারীর জীবন-সংগ্রাম। সবার জন্য খাবার তৈরি, সন্তানের যত্ন নেওয়া, নিজের কাজের জন্য তৈরি হওয়া– সব সামলে ঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানো। অফিসের চাপে ক্লান্ত মা। ঘরে ফিরেও তাঁর শান্তি নেই। সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের খুঁটিনাটি, সবার যত্নআত্তি তাঁকেই করতে হয়। এ যেন এক চক্রাকার দায়িত্বের অমোঘ নিয়ম। ক্লান্ত হলেও মায়ের মুখে কোনো অভিযোগ নেই। সন্তান ও পরিবারে হাসিই যেন তার একমাত্র প্রাপ্তি। এখনও লিঙ্গবৈষম্য পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান। কর্মজীবী নারীর শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অসুবিধাগুলো নিয়ে এখনও বেশির ভাগ জায়গায় কোনো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ঋতুকালীন, মাতৃত্বকালীন বা মাতৃত্ব-পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। বেতনবৈষম্যও প্রবল।
এ তো গেল শহুরে কর্মজীবী নারীর গল্প। গ্রামীণ বা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর সংগ্রাম আরও তীব্র। দিনমজুরের কাজ, গৃহস্থালি, সন্তান লালনপালন– সবকিছু একাই সামলে নিতে হয় তাদের। অন্যদিকে, যারা কর্মজীবী নন, তাদের জীবন-সংগ্রাম আরও বেশি জটিল। কর্মজীবী নারীর যেমন কাজের ক্ষেত্র ধরে একটা পরিচয় থাকে, গৃহিণী নারীর ক্ষেত্রে তেমন থাকে না এবং তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও নেই, নেই কোনো ছুটি। অথচ গৃহস্থালি কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না বলে এগুলোকে মূল্যহীন বা অদৃশ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় সমাজে। অথচ তাদের অমূল্য শ্রমের বিনিময়ে যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে পরিবার বা সামাজিক কাঠামো। নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না হলেও কিছু গবেষণায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের (২০১৩) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহিণী নারী বিনা মূল্যে যেসব গৃহস্থালি কাজ করেন, সেগুলোর আনুমানিক মূল্য বছরে ২২৭.

৯৩ থেকে ২৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। এ অবদান জাতীয় আয়ের সঙ্গে যোগ করলে নারীর অবদান ২৫ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে উঠে এসেছে, কর্মজীবী নারী ঘরের কাজসহ পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি পরিশ্রম করেন। এ কাজের বেশির ভাগই থেকে যায় অদৃশ্য। এই গৃহস্থালি শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্যায়ন নেই, নেই সামাজিক স্বীকৃতি। সামাজিক রীতিনীতি, পরিবারের শর্ত, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ– সবকিছুর মাঝে তাকে টিকে থাকতে হয়। তবু নারীরা কাজ থামান না। কারণ তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে থমকে যাবে ঘরের, এমনকি সমাজেরও চাকা। এই সময়ে এসে যেহেতু আমরা একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখছি; তাই নারীর সমতা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করতে হলে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সর্বোপরি ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে একটি সুষম ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ রমজ ব পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত