চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের
Published: 12th, April 2025 GMT
চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) চলমান মৌসুমটা খুবই বাজে কাটছে। আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে হলুদ শিবিরটি। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে টানা পঞ্চম ম্যাচ হেরেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সিএসকে ৬ ম্যাচে কেবল ১টি জিতেছে। ফলে তারা পয়েন্ট তালিকার নবম স্থানে রয়েছে। শুধুমাত্র নেট রান রেটের কারণে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের উপরে আছে তারা। তবে সিএসকের ব্যাটিং কোচ মাইকেল হাসি এখনও আশাবাদী। এই অজির ধারণা, এখান থেকে ঘুরে তার দল প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারবে।
এখনো আটটি ম্যাচ বাকি থাকায়, হাসি বিশ্বাস করেন যে চেন্নাই লিগ পর্বের শেষ দিকে চতুর্থ স্থানে পৌঁছাতে পারে। কেকেআরের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর তিনি বলেন, “আমরা এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। আমাদের চতুর্থ স্থানে পৌঁছাতে হবে। আর আইপিএলের মতো বড় ও দীর্ঘ টুর্নামেন্টে মোমেন্টাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
হাসি স্বীকার করে নিলেন যে, তার দল খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছে। তবে সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান মনে করিয়ে দিলেন যে কোন মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভব। হাসি বলেন, “আমরা এটা স্বীকার করছি, এখন আমাদের মোমেন্টাম নেই। আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পরিবর্তন আসতে পারে না বা দ্রুত আসতে পারে না। আমরা এখনো সেই আশায় আছি এবং সেদিকেই কঠোর পরিশ্রম করছি। যদি আমরা মোমেন্টাম বদলাতে পারি, আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারি, কয়েকটা ম্যাচ জিততে পারি, তাহলে সবকিছুই সম্ভব।”
আরো পড়ুন:
ধোনির অধিনায়কত্বেও ভাগ্য বদলালো না চেন্নাইর
পিসিএল ছেড়ে আইপিএলে বোশ, মিলল পিসিবির নিষেধাজ্ঞা
“আমরা হয়তো শেষ দিকের কোনো একটি প্লে-অফের স্থানে জায়গা করে নিতে পারি। এখনো অনেক পথ বাকি, এবং আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু পাল্টাতে হবে। কিন্তু আমরা এখনও বিশ্বাস করি, আমরা তা করতে পারি।”- যোগ করেন হাসি।
হাসি আরও বলেন, এই সময়ে একসঙ্গে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলাফলের জন্য একাদশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার দরকার নেই। “এই সময় আমাদের একজোট হয়ে থাকতে হবে, কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। যেসব দিকগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, সেগুলো নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। অনেকেই আমাদের খেলার স্টাইল নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের যে খেলোয়াড়রা আছে, আমরা তাদের এমনভাবে খেলতে বলি না যা তাদের স্বাভাবিক খেলাকে বদলে দেয়। তারা আইপিএলে এসেছে তাদের নিজস্ব স্টাইলেই ভালো খেলে। আমি এমন কেউ না যে তাদের খেলায় বড় পরিবর্তন আনতে চাই।”
সোমবার (১৪ এপ্রিল) লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টের বিপক্ষে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে মাঠে নামবে চেন্নাই।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও পাহাড়ের নিচে বাস ২০ সহস্রাধিক মানুষের
২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড় ধসের দৃশ্য এখনও চোখে ভেসে উঠলে শিউরে উঠি। এখনও আমার ঘরের আশপাশে সেই পাহাড় ধসের চিহ্ন রয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি, আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজি। কিন্তু আমরা অসহায় ও গরিব, যেখানে পেটের ভাত জোগাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিরাপদ ভাড়া বাসায় থাকার সামর্থ্য কোথায়? তাই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ের নিচে বসবাস করছি।
কথাগুলো বলছিলেন রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর লোকনাথ মন্দিরের পাশে সিএনবির পাশে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা পঞ্চাশোর্ধ্ব নূরজাহান। শুধু নূরজাহান নন, রূপনগর, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, লোকনাথ মন্দির এলাকা, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন নিচু এলাকা, কিনারাম পাড়াসহ শহরের অন্তত ২৯টি স্থানে ২০ হাজারের বেশি নিম্ন আয়ের মানুষ মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে। একটু ভারী বৃষ্টি এলেই সবার স্মৃতিতে ফিরে আসে, ২০১৭ সালের এ দিনে শহরে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু পুনর্বাসন না হওয়ায় পাহাড়ের নিচে বসবাস বন্ধ হয় না। উল্টো দিন দিন বাড়ে।
এমন অবস্থায় আজ শুক্রবার ২০১৭ সালেই সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার আট বছর পূর্ণ হলো। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, সাপছড়ি, মগবান, বালুখালী, জুরাছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যু হয়। মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর থেকে মাটি সরাতে গিয়ে ৫ সেনা সদস্য পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়েন। ওই সময় পাহাড় ধসে জেলায় ১৬০০ থেকে ১৭০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সারাদেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এক সপ্তাহ। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পর ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের কাপ্তাইয়ে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
২০১৭ সালের সেই পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের পুনর্বাসন করতে পারেনি প্রশাসন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করেই দায় সারে তারা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্থাপনা নির্মাণ না করতে মাঝেমধ্যে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। কিন্তু এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান আজও হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শিমুলতলী, রূপনগর, লোকমন্দির পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি এলাকা, নতুনপাড়া, বিদ্যানগর, কিনারামপাড়া, সিলেটি পাড়াসহ অন্তত ২৯টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নানিয়ারচর, কাউখালীসহ কয়েকটি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এখনও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রূপনগর, লোকনাথ মন্দির, মুসলিমপাড়া এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ওই পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। কথা হয় রূপনগর এলাকার বাসিন্দা সমলা আক্তার, কমলা বেগম, আব্দুল মান্নান ও শাহানা বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, ভারী বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। বেশি বৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু সম্পদ হারানোর ভয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না।
তারা আরও জানান, সবাই চায় ভালো ও নিরাপদ স্থানে বসবাস করতে। তাই সরকার যদি তাদের পুনর্বাসন করে তাদের জন্য ভালো হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের পুনর্বাসন চলমান প্রক্রিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে জটিলতা হচ্ছে, যেখান থেকে মানুষজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়, সেখানে আবারও নতুন লোকজন বসবাস শুরু করে। এসব এলাকায় লোকজন কম টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। তা ছাড়া পাহাড়ে ভূমি জটিলতা থাকার কারণে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বা পাহাড়ের ঢালুতে মানুষ বসবাস করছে। যারা অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থাও। তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি।