চৈত্রসংক্রান্তিতে নড়াইলে ‘আগুন–সন্ন্যাস’ পূজা, জ্বলন্ত পথে হেঁটে গেলেন সন্ন্যাসীরা
Published: 14th, April 2025 GMT
মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে লম্বা একটি গর্ত। সেই গর্তে ফেলা হয়েছে কয়েক মণ কাঠ; জ্বালানো হয়েছে আগুন। আগুনে পুড়ে কাঠ পরিণত হয়েছে এক জ্বলন্ত অগ্নিপথে। খালি পায়ে, নির্ভয়ে সেই পথ পেরিয়ে যাচ্ছেন একে একে সন্ন্যাসীরা।
ঢাকঢোল আর শঙ্খধ্বনির তালে তাল মিলিয়ে, ভক্তিময় পরিবেশে কয়েক মিনিট ধরে চলল সেই অগ্নিপদযাত্রা। দর্শকের চোখে বিস্ময়, ভক্তদের মুখে মুখে প্রার্থনা। গতকাল রোববার রাতে এ দৃশ্যের দেখা মেলে নড়াইল সদর উপজেলার কোড়গ্রাম বারোয়ারি মন্দির প্রাঙ্গণে।
সনাতন ধর্মের মানুষের কাছে এটি ‘আগুন–সন্ন্যাস’ পূজা নামে পরিচিত। তাঁরা বলেন, মহাদেব শিবকে তুষ্ট করতে প্রতিবছর বাংলা বছরের শেষ সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন পূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘আগুন–সন্ন্যাস’। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে এই বিশেষ আচার পালিত হয়। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে জ্বলন্ত পথ তৈরি করে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শিবের আরাধনা করা হয় এবং পরিবার ও সমাজের শান্তি, কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
আগুন–সন্ন্যাসে অংশ নেওয়া মিলন পরামান্য নামের এক সন্ন্যাসী বলেন, ‘এ বছর আগুন–সন্ন্যাসে আমরা ২২ জন সন্ন্যাসী অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া বহিরাগত আরও কয়েকজন এতে অংশ নিয়েছেন। ৩০ মণ কাঠ জ্বালিয়ে জ্বলন্ত পথ তৈরি করে তার ওপর দিয়ে আমরা হেঁটেছি। এতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি, সবাই সুস্থ আছেন। অন্যান্য রীতিনীতি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভগবান নিশ্চয়ই এর বিনিময়ে আমাদের কৃপা (দয়া) করবেন।’
সন্ন্যাসীদের মতে, আগুন–সন্ন্যাস কেবল শারীরিক সাহসের নয়, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতারও এক প্রতীক। সারা দিন উপোস থাকা, মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা—এই সবই একধরনের আত্মনিয়ন্ত্রণের সাধনা। এই আচার মূলত একধরনের আত্মোত্সর্গ ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে মহাদেবের কৃপায় আগুনও কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এ ধরনের তপস্যা বা রীতি সাধারণত আত্মশুদ্ধি, ঈশ্বরের প্রতি অটল ভক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়।
প্রশান্ত পরামান্য নামের এক সন্ন্যাসী বলেন, চার বছর ধরে আগুন–সন্ন্যাসে অংশ নিচ্ছেন। এতে অংশ নেওয়ার সারা দিন উপোস থাকেন। মনপ্রাণকে এক করে সব খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকেন। এরপরই এই আগুনের পথের ওপর দিয়ে হেঁটে যান। মহাদেবের কৃপায় তাঁদের কিছুই হয় না।
আগুন–সন্ন্যাস দেখতে ভিড় করেন সনাতন ধর্মের মানুষ। তাঁদের একজন বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের এখানে এই আগুন সন্ন্যাস পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজা সচরাচর সবখানে হয় না। তাই অনেক মানুষ এটি দেখতে এখানে ভিড় করেন। এই পূজার মধ্য দিয়ে আমরা ভগবান শিবের কাছে চাই যে, তিনি আমাদের সকলের মঙ্গল করুক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বলন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো
সৌন্দর্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে এ দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বোটক্স। মুখে বয়সের ছাপ কমিয়ে, মসৃণ ও প্রাণবন্ত চেহারা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই চিকিত্সাপদ্ধতি। বোটক্স শব্দটি এসেছে বটুলিনাম টক্সিন থেকে। এটি একধরনের প্রোটিন, যা ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।
বোটক্স প্রয়োগ করা হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। এটি বলিরেখা ছাড়াও অন্যান্য সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। যে কারণে ত্বক দেখায় আরও তরুণ। এটি একটি নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক পদ্ধতি, যা মুখের বিভিন্ন অংশে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কপাল, চোখের চারপাশ ও ঠোঁটের আশপাশ। যদিও এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলে এটি নিরাপদ ও উপকারী।
বোটক্স যেভাবে কাজ করেআমাদের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, যেমন হাসি, রাগ বা চিন্তার ফলে মাসল সংকোচন হয়। বারবার এ সংকোচনের ফলে ত্বকে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে। বোটক্স ইনজেকশন মাংসপেশির ওই সংকোচনপ্রক্রিয়াকে সাময়িকভাবে শিথিল করে দেয়। এটি স্নায়ু ও মাসলের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাইলকোলিন নামে একধরনের রিসিপ্টরকে ব্লক করে, ফলে স্নায়ু থেকে মাসলে সংকোচনের সংকেত পৌঁছায় না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাসল শিথিল থাকে আর ওই জায়গার বলিরেখা কমে যায় বা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। ত্বক দেখায় মসৃণ।
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বোটক্সকপালে বলিরেখা দূর করে।
চোখের পাশের কুঁচকে যাওয়া বা ক্রস ফিট কমায়।
ভ্রুর মাঝের ভাঁজ কমায়।
ঠোঁটের পাশের রেখা ও চোয়ালের অংশকে সুগঠিত করে।
কিছু ক্ষেত্রে ঘাম কমাতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঅ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি কি খুব ব্যয়বহুল?২১ আগস্ট ২০২৪চিকিত্সায় ব্যবহারবোটক্স দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে।
চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া বা চোখের পাতার খিঁচুনি কমাতে বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, অতিরিক্ত লালা ঝরার মতো অসুখেও বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
প্রভাব ও স্থায়িত্ববোটক্স প্রয়োগের প্রভাব সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এটি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আবার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোটক্স নিরাপদ, তবু এটি প্রয়োগের পর কিছু সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন হালকা ব্যথা, ফোলা ভাব, মাথাব্যথা বা ইনজেকশনের স্থানে অস্বস্তি। তাই অবশ্যই এটি প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
বয়সের ছাপ লুকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে বা সৌন্দর্য বাড়াতে বিশ্বজুড়ে বোটক্স এখন একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায়। তবে মনে রাখা উচিত, সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ওজন ও ইউরিক অ্যাসিড কমানোসহ কত গুণ চিচিঙ্গার ২২ ঘণ্টা আগে