মাটি খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে লম্বা একটি গর্ত। সেই গর্তে ফেলা হয়েছে কয়েক মণ কাঠ; জ্বালানো হয়েছে আগুন। আগুনে পুড়ে কাঠ পরিণত হয়েছে এক জ্বলন্ত অগ্নিপথে। খালি পায়ে, নির্ভয়ে সেই পথ পেরিয়ে যাচ্ছেন একে একে সন্ন্যাসীরা।

ঢাকঢোল আর শঙ্খধ্বনির তালে তাল মিলিয়ে, ভক্তিময় পরিবেশে কয়েক মিনিট ধরে চলল সেই অগ্নিপদযাত্রা। দর্শকের চোখে বিস্ময়, ভক্তদের মুখে মুখে প্রার্থনা। গতকাল রোববার রাতে এ দৃশ্যের দেখা মেলে নড়াইল সদর উপজেলার কোড়গ্রাম বারোয়ারি মন্দির প্রাঙ্গণে।

সনাতন ধর্মের মানুষের কাছে এটি ‘আগুন–সন্ন্যাস’ পূজা নামে পরিচিত। তাঁরা বলেন, মহাদেব শিবকে তুষ্ট করতে প্রতিবছর বাংলা বছরের শেষ সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন পূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘আগুন–সন্ন্যাস’। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে এই বিশেষ আচার পালিত হয়। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে জ্বলন্ত পথ তৈরি করে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শিবের আরাধনা করা হয় এবং পরিবার ও সমাজের শান্তি, কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করা হয়।

আগুন–সন্ন্যাসে অংশ নেওয়া মিলন পরামান্য নামের এক সন্ন্যাসী বলেন, ‘এ বছর আগুন–সন্ন্যাসে আমরা ২২ জন সন্ন্যাসী অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া বহিরাগত আরও কয়েকজন এতে অংশ নিয়েছেন। ৩০ মণ কাঠ জ্বালিয়ে জ্বলন্ত পথ তৈরি করে তার ওপর দিয়ে আমরা হেঁটেছি। এতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি, সবাই সুস্থ আছেন। অন্যান্য রীতিনীতি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভগবান নিশ্চয়ই এর বিনিময়ে আমাদের কৃপা (দয়া) করবেন।’

সন্ন্যাসীদের মতে, আগুন–সন্ন্যাস কেবল শারীরিক সাহসের নয়, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতারও এক প্রতীক। সারা দিন উপোস থাকা, মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা—এই সবই একধরনের আত্মনিয়ন্ত্রণের সাধনা। এই আচার মূলত একধরনের আত্মোত্সর্গ ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে মহাদেবের কৃপায় আগুনও কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এ ধরনের তপস্যা বা রীতি সাধারণত আত্মশুদ্ধি, ঈশ্বরের প্রতি অটল ভক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়।

প্রশান্ত পরামান্য নামের এক সন্ন্যাসী বলেন, চার বছর ধরে আগুন–সন্ন্যাসে অংশ নিচ্ছেন। এতে অংশ নেওয়ার সারা দিন উপোস থাকেন। মনপ্রাণকে এক করে সব খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকেন। এরপরই এই আগুনের পথের ওপর দিয়ে হেঁটে যান। মহাদেবের কৃপায় তাঁদের কিছুই হয় না।

আগুন–সন্ন্যাস দেখতে ভিড় করেন সনাতন ধর্মের মানুষ। তাঁদের একজন বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের এখানে এই আগুন সন্ন্যাস পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজা সচরাচর সবখানে হয় না। তাই অনেক মানুষ এটি দেখতে এখানে ভিড় করেন। এই পূজার মধ্য দিয়ে আমরা ভগবান শিবের কাছে চাই যে, তিনি আমাদের সকলের মঙ্গল করুক।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বলন ত

এছাড়াও পড়ুন:

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার

দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’

জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।

এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।

অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’

ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।

শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ