নারায়ণগঞ্জে বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 15th, April 2025 GMT
বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে অবস্থান নিলে এতে প্রায় ২০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনাদী এলাকার এসটি গার্মেন্টসে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। ঈদের আগে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছিলেন। তখন মালিকপক্ষ ঈদের পর বকেয়া বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। ঈদের ছুটি শেষে আজ মঙ্গলবার শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে এসে দেখেন কারখানা বন্ধ।
এরপর কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় অবস্থান নেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। পরে শ্রমিকেরা নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরে যান এবং দাবি জানিয়ে আবেদন করেন।
কারখানার শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, তাঁর দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। মালিকপক্ষ ঈদের বেতন-বোনাসের পরিশোধ করবে বলে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কারখানায় এসে দেখেন তালা দেওয়া।
আরেক শ্রমিক সালাউদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি মালিকপক্ষ রাতের আঁধারে কারখানা বন্ধ করে মালামাল নিয়ে গেছে। ঈদের পর শ্রমিকদের সবার হাত খালি; কাজও বন্ধ।’ দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে কারখানার মালিক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোনে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে তাঁরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কে অবস্থান নিলে প্রায় ১০ মিনিটের মতো যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।