পুরাতন বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, অপশক্তি দূর করে ধুয়েমুছে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন। ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ১৫ দিনব্যাপী সামাজিক উৎসবের সমাপ্তি ঘটল। সাংগ্রাই গানের সুরে সুরে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে দেন। দিনব্যাপী উৎসব পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়।
কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে এ আয়োজনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর অংশ নেন। সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মহাসাংগ্রাই রিলাং পো য়েঃ বা জলকেলি হয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে অন্যের সহচর্যে আসা ও প্রিয় মানুষ বেছে নেওয়ার সুযোগ হয়।
ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় রাখা পানি দিয়ে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। জলকেলির পাশাপাশি চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। উৎসবে তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। এছাড়া মাঠে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা। এতে খাবার, কাপড়-চোপড় ও গৃহস্থালি সামগ্রির পসরা বসে। সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়।
উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন। অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াই মং মারমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ক্যওসিং মং মারমা। এ সময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নাউপ্রু মারমা, সাগরিকা রোয়াজা, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব হ্লাসুই মং মারমা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার শুরুতে মারমা শিল্পীরা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন। পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে ও পানি ছিটিয়ে দিয়ে জলকেলি উদ্বোধন করেন।
জেলকেলিতে অংশ নেওয়া ম্যউসিং বলেন, ‘সবাইকে মৈত্রীময় জল ছিটিয়ে দিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকি আমরা।’ উৎসব দেখতে আসা নীলা চাকমা বলেন, ‘প্রতি বছর এ উৎসবটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি।’ চিৎমরমের এলাকার আইনজীবী লাথোয়াই মারমা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি পুরোনো বছরে সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, ব্যর্থতা পানি ছিটানোর মাধ্যমে ধুয়েমুছে যাবে।’
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াই মং মারমা জানান, এই সম্প্রদায় তিন দিনের উৎসব উদযাপন করে। ১৩ এপ্রিল ফুল দিয়ে সাংগ্রাইকে বরণ করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে দিন কেটেছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জলক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু