আলো ঝলমলে সন্ধ্যা। গায়ে নতুন জামা। মুখে ভারী মেকআপ। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক আর চোখে একটু অতিরিক্ত চকমক। আপনি হয়তো ছিলেন পার্টির প্রাণ, সবার দৃষ্টি আপনার দিকেই ছিল।
এই তো কিছুদিন আগেই গেল ঈদ। এরপর এলো পহেলা বৈশাখ। উৎসবের পর উৎসবের আগমনে প্রতিটি পার্টিতে চেয়েছেন সবসময় আপনাকে দেখতে আকর্ষণীয় লাগুক। আবার অনেকে হয়তো উৎসবের ছুটিতে পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে প্রচুর ঘুরেছেন। উৎসবের উৎসাহে ত্বকটা যে ছিল সারাক্ষণ মেকআপের নিচে, পুড়েছে রোদে। এখন তা কেমন যেন নিঃশব্দ, শুষ্ক আর ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই ত্বকেরও দরকার বিশ্রাম। দরকার যত্ন, শান্তি আর সামান্য নিঃশ্বাস। এ জন্য এ সময়টায় ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। কারণ মেকআপ, ধুলাবালি ও অতিরিক্ত খাবার, অনিয়মিত ঘুম আমাদের ত্বককে নিস্তেজ করে দিয়েছে। এ কারণে সবার জানা প্রয়োজন কিছু কার্যকরী টিপস। এ ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য ‘পোস্ট-ফেস্টিভ্যাল রিচুয়াল’ মেনে
চলা জরুরি।
ক্লিনজিং
শুরুতে যে ধাপের কথা আসে তা হলো ক্লিনজিং। এ জন্য প্রথমে তুলে ফেলতে হবে মেকআপের মুখোশ, যার আড়ালে আপনি ছিলেন পুরো সময়টা। মেকআপ রিমুভার, মাইসেলার ওয়াটার বা নারকেল তেল ব্যবহার করে ত্বককে পরিষ্কার করুন।
এ ব্যাপারে রূপ বিশেষজ্ঞ শোভনস মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা বলেন, ‘উৎসব শেষে ত্বকের জন্য সবার আগে ডিপ ক্লিনজিং দরকার। এ ক্ষেত্রে আমরা ডিপ ক্লিনজিং ফেসিয়ালগুলোকে সাজেস্ট করি। এ ছাড়া যারা আগে ট্রিটমেন্ট সেশনে রানিং ছিলেন তারা তাদের সেশনগুলো কমপ্লিট করবেন।’
তাছাড়া ঘরোয়াভাবে ক্লিনজার রিচুয়াল করতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুখটা আলতো করে সেঁক দিন। নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল দিয়ে ২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ত্বক আবার নিজের মতো করে নিঃশ্বাস নিতে পারে।’
এক্সফোলিয়েট করুন (স্ক্রাব)
সপ্তাহে দু’দিন মাইন্ড স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করুন। এর জন্য একটা বিশেষ স্ক্রাব রেসিপি প্রয়োজন। ১ চা চামচ চালের গুঁড়া, ১ চা চামচ দই, সামান্য মধু একত্রে মিশিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। অতিরিক্ত ঘষাঘষি থেকে বিরত থাকুন।
টোনার ব্যবহার
ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখতে অ্যালকোহলমুক্ত টোনার ব্যবহার করুন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক নরম ও হাইড্রেটেড থাকে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
উৎসব কিংবা ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গেলেও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি কিন্তু সবসময় থাকে। যদি আকাশ মেঘলা থাকে ঘরে থাকুন। এমনকি জানালার পাশে বসে থাকলেও অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকে পড়ে। এ জন্য ত্বকের যত্নে প্রতিদিনের রুটিনে সানস্ক্রিন থাকা প্রয়োজন।
সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে রক্ষা করবে ট্যান, দাগ ও কালচে ভাব থেকে।
এ জন্য প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে এবং বাইরে থাকলে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর আবার লাগাতে হবে।
হাইড্রেট থাকুন
তৃষ্ণার্ত ত্বকের প্রয়োজন হাইড্রেট থাকা। এ জন্য দুই মিনিটের হাইড্রেশন রিচুয়াল করতে পারেন। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা অ্যালোভেরা জেল বের করে ত্বকে লাগিয়ে নিন ধীরে ধীরে, যেন একেকটা কোষ জেগে ওঠে। চাইলে এক ফোঁটা ভিটামিন-ই তেল মেশাতে পারেন। এটি ত্বকের মসৃণতা ফিরিয়ে আনে।
মাস্ক বা প্যাক লাগান
রূপবিশেষজ্ঞ শোভন বলেন, ‘আমরা ত্বকের ধরন বুঝে ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এখন যেহেতু অনেক বেশি রোদ চলছে তাই শিট মাস্ক ব্যবহার করতে বলব।’
তিনি আরও বলেন, ক্লান্ত ত্বকের প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে ঘরোয়া রিসেট মাস্কও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘরোয়া মাস্কের জন্য ২ টেবিল চামচ চটকানো পাকা কলা, ১ টেবিল চামচ দুধ, ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন, এই মাস্ক শুধু ত্বক নয়, মনও ঠান্ডা করে।
হাত-পায়ের যত্ন
এ ব্যাপারে শোভন সাহা বলেন, ‘উৎসবের আমেজে যারা ঘুরতে গিয়েছিল বা অনেক বেশি কাজের চাপ গিয়েছে তাদের হাত-পায়ের অবস্থা খুব খারাপ থাকলে পেডিকিউর-মেনিকিউর করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের স্কিনকে সফট করে এমন কিছু পেডিকিউর-মেনিকিউর করতে পারে।’
পুষ্টিকর খাবার
বাইরে থেকে যত যত্ন নেওয়া হোক না কেন ভেতর থেকে ঠিক না হলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসবে না। ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে শরীরের প্রয়োজন হয় ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ও হেলদি ফ্যাট। এ জন্য খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও শাবসবজি রাখুন।
ঠোঁট ও চোখের যত্নে
ঘন লিপস্টিক আর কাজলের আস্তরণে ঠোঁট আর চোখ কি হারিয়ে ফেলেছে নিজের প্রাণ?
এ ক্ষেত্রে ঠোঁটে ঘি বা বিটরুট জুস মেশানো নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। চোখে ঠান্ডা টি ব্যাগ বা তুলোয় গোলাপ জল আর রাতভর লাগানো আয়ুর্বেদিক আই
ক্রিম পারে আপনার ঠোঁট আর চোখের প্রকৃত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের সময় শরীর নিজের কোষগুলো রিপেয়ার ও ত্বকের নতুন কোষ তৈরি করে। ফলে ক্লান্ত ত্বক হয়ে ওঠে সতেজ
ও উজ্জ্বল।
উৎসবের আনন্দে অনেকের পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতিতে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল জমে যায়। ত্বক ফ্যাকাশে ও নিস্তেজ হয়ে ব্রণ ও র্যাশ বেড়ে যায়। এ জন্য এ সময়টায় নিয়ম করে পর্যাপ্ত ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
ডিটক্স পানীয়
ত্বক সুস্থ রাখতে শরীর ডিটক্স করাও প্রয়োজন। এ জন্য সকালে গরম পানিতে মধু-লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া দিনে ৮ গ্লাস পানি, ফলের রস বা সবুজ স্মুদি খান। এতে ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ থাকবে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র ব যবহ র পর য প ত উৎসব র র যত ন ত বক র র কর ন এ জন য র জন য ত বকক র করত ম কআপ
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার
বিয়ের পর নতুন জীবনের প্রতিটি দিন যেন কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে ধরা দিচ্ছে তাদের জীবনে। উভয়ের জীবনেই একের পর সুখবর আসছে। বিয়ে পরবর্তী জীবনটা তাই দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজীবের কাছে। এবারের ৭৮ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’ নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন ফ্রান্সে। উৎসবের রাজীবের সিনেমাটি স্পেশাল মেনশন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। এই সাফল্যের উদযাপনে শেষ হতে না হতেই মেহজাবীনও রাজীবেরর সঙ্গে ইউরোপ ঘুরতে উড়াল দেন। সেখানে তাদের নানা মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারও করেন তারা।
সম্প্রতি ভালোবাসার শহর প্যারিসে, আইফেল টাওয়ারের ছায়াতলে এক রোমান্টিক ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন এই জুটি। ছবিতে ধরা পড়েছে আবেগঘন মুহূর্তযেখানে রাজীবের আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন মেহজাবীন, আর তাদের চোখে-মুখে ছড়িয়ে আছে নিঃশব্দ ভালোবাসার ভাষা।
ছবিগুলো প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেনদের প্রশংসার জোয়ারে ভেসে যায় এই দম্পতি। মেহজাবীন নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন ক্যাপশনে, যেখানে তিনি লিখেছেন, "এখনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, তবু এটা আমাদেরই। ভালোবাসার শহরে, যেখানে প্রতিটি রাস্তা বলে যায় এক একটি প্রেমকাহিনি। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাদের গল্পটা এভাবে লিখেছেন।”
উল্লেখ্য, মেহজাবীন চৌধুরীর মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে, লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে প্রথমবারের মতো দর্শকদের নজরে আসেন তিনি।
তারপরই অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ, এটিএন বাংলার জনপ্রিয় নাটক ‘তুমি থাকো সিন্ধু পাড়ে’-র মাধ্যমে। এরপর একে একে বহু নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও বিশেষ নাটকে অভিনয় করে জায়গা করে নেন দর্শকের হৃদয়ে।
এখন, ক্যামেরার বাইরেও রাজীব ও মেহজাবীনের প্রেমভরা গল্প যেন বাস্তব জীবনের এক স্বপ্নের পৃষ্ঠায় ধরা দিচ্ছে। আর এই গল্পে মিশে আছে ভালোবাসা, বন্ধন, কৃতজ্ঞতা আর সৌন্দর্যের চিরন্তন ছায়া।