Prothomalo:
2025-06-16@03:01:36 GMT

আল্লাহর ভয়

Published: 16th, April 2025 GMT

হজরত ওমর (রা.)-এর বর্ণনায় একটি হাদিসে রাসুল (সা.) একদিন প্রাচীনকালের একটি ঘটনা বলেছেন। তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আশ্রয় নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। হঠাৎ পাহাড়ের ওপর থেকে বিরাট এক পাথরের চাই গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তিনজন এবার নিজেদের সৎকর্মের অছিলায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, যেন তিনি তাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।

 তাদের মধ্যে দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আল্লাহ, আমার চাচার একটা মেয়ে ছিল। সে ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমি এতই যে ভালোবাসতাম—একজন পুরুষ কোনো নারীকে যতটা ভালোবাসতে পারে, ততটা। তাকে আমি নিজের কাছে একান্তে পাওয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। সে রাজি হয়নি। বছরখানেক পড়ে প্রচণ্ড অভাবের মুখে পড়ে একদিন সে আমার কাছে এলো। আমি তাকে এই শর্তে এক শ বিশটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম, যেন নির্জনে সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

 সে তা-ই করল। তাকে আমি একদম হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলাম। সে আমাকে বলল, ‘আল্লাহকে ভয় করো, আমার সতীত্ব অবৈধভাবে হরণ কোরো না।’

আরও পড়ুনগায়েবি সাহায্য০৮ এপ্রিল ২০২৫

মেয়েটি ছিল খোদাভীরু ও পরহেজগার। প্রথমে সে তাতে সায় দেয়নি। কিন্তু দারিদ্র্য ও সম্বলহীনতা তাকে সীমাহীন দুর্বল করে ফেলে। অভাব তাকে নিরুপায় অবস্থায় এমন করতে বাধ্য করে। সে আমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমার অন্তরে আল্লাহভীতি উসকে দেয় এবং ইমান জাগিয়ে তোলে। এই উপলব্ধি এনে দেয় যে, যদি সে তাকে কামনা করি, তবে যেন বৈধভাবে বিবাহ করে নিই, পাপ থেকে বিরত থাকি। আমি তখন অনুতপ্ত হই, আল্লাহ, আপনার কাছে তাওবা করে। এই সৎকর্মের মাধ্যমে আপনার কাছে মুক্তি প্রার্থনা করি।

তাদের প্রার্থনায় গুহার মুখ খুলে যায়, পাথরের চাঁই সরে যায়। এবং তারা মুক্তি পায়।

সূত্র: সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৬৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩৪; সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৮,৪৬১; মুসনাদে আহমাদ, ২/১১৬

আরও পড়ুনমহানবীর (সা.

) সময়ে স্বাবলম্বী নারীদের পেশা০৯ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ