বন্ধুর জন্য নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের বহু উদাহরণ আছে। তবে সব বন্ধুত্ব একই রকম নয়। বন্ধু নামের আড়ালে অনেক রকম মানুষই থাকেন। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ আপনাকে ঈর্ষাও করতে পারেন। তবে বন্ধুত্বে ঈর্ষা থাকলে সেটি সব সময় একইভাবে প্রকাশিত না-ও হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, ঈর্ষা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ঈর্ষার ব্যাপারটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে ‘বন্ধু’ আপনার ক্ষতি পর্যন্ত করতে পারেন। বন্ধু হিসেবে কারও ক্ষতি করা বেশ সহজ। কারণ, বন্ধুত্বে থাকে দৃঢ়বিশ্বাস। তাই বন্ধুত্বে ঈর্ষা থাকলে আগেভাগে সাবধান হওয়া ভালো। কিছু ক্ষেত্রে এর সমাধানও করা যেতে পারে। সাধারণ কিছু বিষয় লক্ষ করলে আপনি অনুভব করতে পারবেন, আপনার প্রিয় বন্ধু হয়তো আপনাকে ঈর্ষা করছেন। যদিও বন্ধুত্বের মায়ায় আমরা অনেক সময় বন্ধুর ঈর্ষাকে ঠিক ঈর্ষা বলে মানতে চাই না। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।

আরও পড়ুনছদ্মবেশী বন্ধু চিনবেন কীভাবে২২ মে ২০২৪আচরণে ঈর্ষার ছাপ

ঈর্ষার প্রশ্ন তখনই আসে, যখন আপনি সফলতা পান কিংবা সুখে থাকেন। আপনার ক্যারিয়ার বা ব্যক্তিগত জীবনের নানান দিক নিয়েই কারও ঈর্ষা হতে পারে। যে বিষয়টি নিয়ে আপনি ভালো আছেন, আপনার বন্ধু যদি সেই বিষয়টিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তিনি হয়তো আপনাকে ঈর্ষা করছেন। তাঁর কথার ধরন এবং আচরণ থেকেই আপনি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনি যখন পরিশ্রমের ফল হিসেবে পদোন্নতি পান, আপনার বন্ধু তখন এই সফলতাকে ‘ভাগ্য’ বলে আখ্যা দিতে পারেন কিংবা ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার সুফল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। আবার সাফল্যের উদ্‌যাপনে আপনি একজন ঈর্ষান্বিত বন্ধুকে না-ও পেতে পারেন। কিংবা আপনি যখন ব্যক্তিগত সম্পর্কে সুখী, তখন হয়তো অতীতের কোনো তিক্ততার কথা তিনি মনে করিয়ে দিলেন। আবার আপনি যখন ভালো আছেন, তখন তিনি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়েও দিতে পারেন। বুঝতেই পারছেন, নির্দিষ্ট একধরনের আচরণেই ঈর্ষা প্রকাশিত হয় না। বরং তাঁর আচরণ, কথা, কণ্ঠস্বর—সব মিলিয়েই আপনি পাবেন ঈর্ষার ছাপ।

আরও পড়ুনআপনার বন্ধু মোটে এক বা দুজন? জেনে নিন আপনি মানুষ হিসেবে কেমন২১ নভেম্বর ২০২৪সমাধান যেভাবে

বন্ধু আপনাকে ঈর্ষা করছেন বলে মনে হলেই যে আপনি বন্ধুত্বের ইতি টানবেন, তা কিন্তু নয়। খোলামেলাভাবে তাঁর সঙ্গে আলাপ করুন। তবে সরাসরি ঈর্ষার প্রসঙ্গ তুলবেন না। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণেও তিনি নেতিবাচক আচরণ করে থাকতে পারেন, যেটিকে হয়তো আপনি ঈর্ষা ভেবে ভুল করছেন। তাই তাঁর আচরণের অসংগতিগুলো নিয়ে কথা বলুন। এর কারণ জানতে চান। আপনার সাফল্যের যে তিনিও একজন অংশীদার, সেটি তাঁকে বুঝিয়ে দিন। তিনি কোনো ব্যক্তিগত সমস্যায় থাকলে তা সমাধানে সাহায্য করুন অবশ্যই।

সাবধানের মার নেই

সব চেষ্টার পরও যদি বন্ধুর আচরণের সেই খারাপ দিকগুলোর কিছুটা রয়েই যায়, তাহলে একটি সীমারেখার ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ভালো। এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আর এই বন্ধুটির সঙ্গে ভাগ করে নেবেন না, যেটির কারণে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের ক্ষতি হতে পারে। এটা ঠিক যে বন্ধুত্ব নষ্ট হলে আপনার কষ্ট হবে। তবে জীবনে নিরাপদ থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো থাকার জন্য তাই নিজের পরিবার এবং ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিন। নতুন বন্ধুত্বও গড়ে তুলতে পারেন, তবে অবশ্যই বুঝেশুনে।

আরও পড়ুনআপনার জীবনে কি এই সাত ধরনের বন্ধু আছে?১৪ ডিসেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ধ ত ব আপন র ক র আচরণ র বন ধ আপন ক করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের