জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি ‘ম্যান্ডেটরি’ (বাধ্যতামূলক) দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।

জামায়াতের আমির গতকাল বুধবারও বলেছিলেন, ‘আমাদের ভিউ হচ্ছে, এটা (নির্বাচন) রমজানের আগেই শেষ করতে হবে। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড়ঝাপটা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার ইলেকশনটা (নির্বাচন) অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সে জন্য আমরা চাইছি, ওই আশঙ্কার আগেই যেন নির্বাচন হয়ে যায়।’

ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফরের খুঁটিনাটি জানিয়ে আজ জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা (বিদেশিরা) আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে জানতে চেয়েছে যে, এই নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে? আমরা বলেছি, অনেক ত্যাগ এবং চেষ্টার বিনিময়ে যে পরিবেশ এসেছে, সেই পরিবেশ তিনটি ম্যান্ডেটরি জিনিস দাবি করছে। প্রথম হলো, দৃশ্যমান, গ্রহণযোগ্য, মৌলিক সংস্কার। কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গা আমরা মেনশন (উল্লেখ) করেছি, যা ইতিপূর্বে আমরা জাতির সামনে পেশ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কমিশনগুলোর কাছে জমা দিয়েছি। আমরা বলেছি, সংস্কারগুলো সাধন না করে যেই নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি রচনা করতে পারবে না। বরং অতীতের যেসব নির্বাচন দেশ ও জাতির কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, সেরকম হয়তো আরেকটা খারাপ নির্বাচন হবে। আমরা ওই নির্বাচন চাই না।’

শফিকুর রহমান বলেন, হাজার প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে, আহত হওয়ার বিনিময়ে দেশে এই পরিবর্তন এসেছে। তাই অবশ্যই সংস্কার সাধন করতেই হবে। এই সংস্কার কারা করবে? সংস্কারের প্রধান অংশীজন হলো রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যত তাড়াতাড়ি ও আন্তরিকতার সঙ্গে সংস্কারে সহযোগিতা করবে, তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। সংস্কার যদি না হয়, তাহলে সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বিষয়ে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ না হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে পড়বে। আর তার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাস্তবতার কাতারে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংস্কারে সহযোগিতা করতে হবে।

জামায়াতের আমির বলেন, দ্বিতীয় দাবি হলো, যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছে, এই খুনের দায় যাদের তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান বিচার এই জাতিকে দেখাতে হবে। যাতে খুনিদের বিচারের বিষয়ে জাতির আস্থা ফিরে আসে।

তৃতীয় দাবির বিষয়টি জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, এটি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরকে সম্মান করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জিতে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু, আর হেরে গেলে দুষ্ট—এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সেই নির্বাচনটা এমন হতে হবে, যে নির্বাচন নিয়ে কেউ সহজে প্রশ্ন তুলতে না পারে। এ জন্য অনেক ডায়ালগ ও এনগেজমেন্টের (আলাপ-আলোচনা-সম্পৃক্ততা) প্রয়োজন। এটি সরকারের তরফ থেকে হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে হতে পারে, সিভিল সোসাইটি (সুশীল সমাজ) থেকেও হতে পারে। এটা যখন মাল্টিপল (বহুপক্ষীয়) জায়গা থেকে, তখন একটা পরিবেশ তৈরি হবে। তাঁরা সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

জামায়াতের আমির বলেন, তারা (বিদেশিরা) নির্বাচনের সময় জানতে চেয়েছেন। তাঁরা তাদের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা মনে করেন, আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির জন্য, সংস্কারের জন্য, বিচারের জন্য এই সময়টা গ্রহণযোগ্য। এই সময়ের সীমা যাতে অতিক্রম করে না যায়, তাঁরা সেই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সাক্ষাতে তাঁরা রোজার আগে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে বলেছেন। তিনি আবার বলছেন, এটা তখনই হতে পারে, যখন এই শর্তগুলো পূরণ হতে পারে।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘শর্ত পূরণ ছাড়া মার্চ, ফেব্রুয়ারি—কোনো কিছুই ঠিক থাকবে কি না আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন।’

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের দাবি করতে পারি, দিনক্ষণ ঠিক করে দিতে পারি না। আমরা বলেছি, নির্বাচন এই সময়েই হতে পারে। দাবি পূরণ হলে তার আগে হলে আপত্তি নেই, পরে হলেও সমস্যা নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়েতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এটিএম মাসুম, নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, মাওলানা আনম শামসুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে মার্জিন হিসাবে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই এ সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে কমিশনে জমা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্টব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।

আরো পড়ুন:

৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ

ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা

ওই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা জমা দানের বিষয়ে আজকের কমিশন সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:

* গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

* পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসকল বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা
  • আগামীকাল গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দেওয়া হবে: আলী রীয়াজ
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল