ট্রাভিস হেডের বিজ্ঞাপনে বেঙ্গালুরুকে অপমান, আদালতে মামলা
Published: 17th, April 2025 GMT
বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ ভারতের দক্ষিণের দুই রাজ্য কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার রাজধানী। নানা বিষয়ে তাদের মাঝেমধ্যে ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায়।
আইপিএলে ট্রাভিস হেড আবার দুই রাজ্যের দলের হয়েই খেলেছেন। ২০১৬ ও ২০১৭ মৌসুম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে কাটানো হেড এখন খেলছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। বিজ্ঞাপনে বেঙ্গালুরুকে খোঁচা দিতে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন পরিষেবা কোম্পানি উবার হয়তো অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনারকেই উপযুক্ত মনে করেছে।
কিন্তু বিজ্ঞাপনে হেডকে দিয়ে বেঙ্গালুরুকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটিকে অপমানজনক মনে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স স্পোর্টস প্রাইভেট লিমিটেডের। উবারের বিরুদ্ধে তাই দিল্লি উচ্চ আদালতে মামলা করেছে তারা।
গত ৫ এপ্রিল একটি বিজ্ঞাপনের ভিডিও প্রকাশ করে উবার। ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি ইউটিউবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, উবার চালককে সঙ্গে নিয়ে ট্রাভিস হেড একটি স্টেডিয়ামে যান (যেটিকে বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বোঝানো হয়েছে)। সেখানে বেঙ্গালুরুর-হায়দরাবাদ ম্যাচ হওয়ায় কথা।
বিজ্ঞাপনের শুরুতে হেড বলেন, ‘বেঙ্গালুরু, তোমরা কি হেডেকের (মাথাব্যথা) জন্য প্রস্তুত?’ এরপর স্টেডিয়ামের গেটে গিয়ে পাহারাদারদের জানান, তিনি সম্প্রচারকর্মী। এই কথা বলে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
আরও পড়ুন১ মিনিটের বিজ্ঞাপনে মেসির আয় ১৫৩ কোটি টাকা৩০ জানুয়ারি ২০২৪এরপর সঙ্গে নিয়ে আসা স্প্রে পেইন্টিং বের করে বেঙ্গালুরুর নামের ওপর ‘রয়্যালি চ্যালেঞ্জড’ লিখে দেন হেড। পাহারাদাররা সেটি বুঝতে পেরে হেড ও তাঁর এক সঙ্গীকে তাড়া করেন। বিপদ আঁচ করতে পেরে হেড সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন এবং বাইরে অপেক্ষারত উবারের বাইকে চড়ে পালিয়ে যান। পালিয়ে যেতে যেতে হেড বলেন, ‘আমি ট্রাভিস হেড এবং আমরা হায়দ্রাবাদি।’
বিজ্ঞাপনটি দেখার পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু মালিকপক্ষের মনে হয়েছে, উবার তাদের ব্র্যান্ডকে নিয়ে উপহাস করেছে। এ কারণে তারা দিল্লি উচ্চ আদালতে উবারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপনে স্প্রে পেইন্টিং বের করে বেঙ্গালুরুর নামের ওপর ‘রয়্যালি চ্যালেঞ্জড’ লিখে দেন ট্রাভিস হেড.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল