২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনার জন্য ফটোগ্রাফি ছিল পেশার চেয়েও বেশি কিছু। এটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার এক অভিযান। গত ১৮ মাসে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি গণহত্যার কারণে ক্যামেরা হাতে ফাতিমা গাজার অলিগলিতে ঘুরতেন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সংরক্ষণ করতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর, শোকাহত পরিবার এবং ধ্বংসের মধ্যে শিশুর চোখে আশার আলো খুঁজে বেরিয়েছে তাঁর ক্যামেরা। ফাতিমার তোলা হাজার হাজার ছবি সারাবিশ্বে গাজায় জীবন ও মৃত্যুর এক অম্লান জানালা খুলে দিয়েছিল। তাঁর লেন্স দেখিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও মর্যাদা, বেদনা ও অদম্যতা, মৃত্যু আর সেই ছোট্ট আনন্দের সময়, যা বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তাঁর তোলা ছবিগুলো শুধু ইমেজ নয়, সেগুলো ছিল গাজাবাসীর অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মানবিকতার গল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যামেরাই তাঁর শক্তিশালী অস্ত্র; যা ইতিহাসকে রক্ষা করবে, যখন গাজার বাস্তবতা বিশ্বের চোখ থেকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ফাতিমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আসমা আবু সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে বলেন, ‘ফাতিমা যাদের ছবি তুলত, তাদের সঙ্গে গভীর আবেগে যুক্ত হতো। সে নারীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলত যেন তারা তার মা। প্রতিটি শিশুকে দেখত নিজের সন্তানের মতো। তার সহমর্মিতা কৃত্রিম ছিল না– এটি ছিল একদম নিখাদ।’
যুদ্ধের মধ্যেও ফাতিমা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর প্রেমিক আজিজের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। ফাতিমার বন্ধুরা জানান, তিনি প্রেমকে যুদ্ধের দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখতেন। ফাতিমার বাগদত্তা আজিজ তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন। তারা পরের সপ্তাহে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। আজিজ এখন মর্মাহত। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না ফাতিমা চলে গেছেন।
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় ফাতিমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এ হামলায় তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইবোন নিহত হন। তাঁর বাবা-মা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। তাঁর বাবা এখনও অজ্ঞান, তিনি জানেন না যে সন্তানরা মারা গেছেন। ফাতিমার মা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফাতিমার ১৮ বছর বয়সী ভাই জিহাদ মিসরে থাকেন। তিনি জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি ফাতিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। জিহাদ বলেন, ‘আমরা খুশি ছিলাম, কারণ আমার অসুস্থ ভাই মুজাহিদ সুস্থ হয়ে উঠছিল, আর ফাতিমা (যার ডাকনাম ফাতুম) তার আসন্ন বিয়ের জন্য উপহার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করছিল।’
ফোন রাখার দুই ঘণ্টা পর জিহাদ দেখলেন গাজা সিটির আল-তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলার খবর। তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে গিয়ে দেখলেন, কোনো ফোনই আর পাচ্ছেন না। পরে তাঁর চাচা জানান, পাঁচতলা ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের পরিবার। জিহাদের ছয় ভাইবোন মারা গেছেন এবং অন্যান্য আত্মীয়-প্রতিবেশী গুরুতর আহত।
জিহাদ জানান, ফাতিমা তাঁর মৃত্যু আগেই আঁচ করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে আল-আরকাম স্কুলে হামলা হওয়ার পর ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জিহাদকে বলছিলেন, ‘তুমি তোমার আর ভাইয়ের যত্ন নিও। আমার মনে হচ্ছে, গাজায় আমাদের সবাই মারা যাব। কারণ চারদিকে শুধু বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ।’
ফাতিমা হাসসুনা শুধু একজন ফটো সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন গাজার অদম্য কণ্ঠস্বর, যার কাজ বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দুঃখ, সংগ্রাম ও অপরাজিত মানসিকতা। তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ফাতিমা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তোলা ছবিগুলো চিরকাল গাজার ইতিহাস, বেদনা ও জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। 
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও নিউ আরব

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

দাবি মেনে নেওয়ায় অনশন ভাঙলেন জবি শিক্ষার্থীরা

দাবি মেনে নেওয়ায় ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজ্জাম্মুল হক ও অন্যান্য শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে দুপুর থেকে রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেছিলেন। 

আরো পড়ুন:

যবিপ্রবিসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জানুয়ারি থেকে বিশেষ বৃত্তি পাবেন জবি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা; জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ; ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আধুনিক সুবিধা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু।

অনশনকারী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “আমাদের দাবি ছিল বৃত্তি প্রদানের নির্দিষ্ট তারিখ, জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা এবং লাইব্রেরিতে সুবিধা বৃদ্ধি। প্রশাসন এগুলো মেনে নিয়েছে। কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও আমরা আস্থা রেখে অনশন ভেঙেছি।”

বাগছাসের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আশা করি, প্রশাসন প্রতিশ্রুতিগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন স্বপ্নের দুয়ার উন্মোচিত হবে।”

অনশনকারী শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এমকেএম রাকিব বলেন, “প্রশাসন আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি, শিক্ষার্থীরা দ্রুতই তাদের কাঙ্ক্ষিত বৃত্তি পাবে এবং অন্যান্য ক্যাম্পাসের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচনের আমেজ তৈরি হবে।”

অনশনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলো।

ঢাকা/লিমন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ