সরকারি অফিসের সেবা গ্রহণ মানে ভোগান্তি আর এর জন্য দালালই ভরসা—এটি যেন এ দেশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে সরকারি সেবা মানে বাড়তি খরচ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেবাদানের প্রক্রিয়া সহজ করার নানা প্রচেষ্টা চলমান আছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য ও গ্রাহক বা ভোক্তাদের অসচেতনতার কারণে এর খুব বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। যেমনটি দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রাজশাহী অফিসে।

রাজশাহীর বিআরটিএ অফিসে বেশ কিছু সেবার জন্য গ্রাহকেরা প্রতিদিনই ভিড় করেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, নম্বর প্লেট, ফিটনেস নবায়নের সেবা দেওয়া হয় এখানে। কিন্তু বেশির ভাগ গ্রাহক এসব কাজ করিয়ে নিচ্ছেন দালালের মাধ্যমে। তাঁদের ভাষ্য, কাজ করতে এসে নানা রকম হয়রানি হতে পারে, সময় লাগতে পারে—এ কারণে দালালের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেন তাঁরা। এতে অতিরিক্ত দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয় একেকজনের। অথচ বিআরটিএ অফিসে সেবার মান বাড়ানো হয়েছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য কার্যক্রম অনলাইনে পুরোপুরি করা যায়। আগে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে সেবাগ্রহীতাকে চার থেকে পাঁচবার বিআরটিএতে আসতে হতো। এখন একবার এলেই হয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট কার্ড হয়ে গেলে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হলে গ্রাহক মুঠোফোনে খুদে বার্তাও পাচ্ছেন। দালাল ছাড়াই কাজ করা সম্ভব গ্রাহকদের এখন।

বিআরটিএর মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে এমন পরিবর্তন অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা আগে বছরে কয়েকবার হতো। এখন প্রতি সপ্তাহে নেওয়া হয়। ফলে এই পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ জটেরও অবসান ঘটেছে। আর সব কাজ অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাওয়া সেবাগ্রহীতাকে শুধু পরীক্ষা ও ফিঙ্গারের জন্য একবার আসতে হয়। এরপরও দালালনির্ভরতা সত্যিই হতাশাজনক।

প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রাহকেরা দালাল চক্রের শরণাপন্ন হচ্ছেন কেন? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিআরটিএর এ পরিবর্তন সম্পর্কে গ্রাহকেরা বেশির ভাগই জানেন না। কথা হচ্ছে, গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিআরটিএ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না? মোটরসাইকেল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগও এসেছে, মোটরসাইকেলের শোরুমের লোকজনই নিবন্ধনের সব কাজ করে দিচ্ছেন। এতে মোটরসাইকেল ক্রেতার বাড়তি খরচ হচ্ছে। আর শোরুমের লোকজনের সঙ্গে বিআরটিএর কতিপয় কর্মকর্তা–কর্মচারীদের যোগাযোগ আছে। তার মানে, সেবার মান বাড়ানো হলেও শর্ষের মধ্যে এখনো ভূত থেকে গেছে।

আমরা আশা করব, বিআরটিএর সেবার বিষয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিআরটিএর কার্যালয়ে একটি হেল্প ডেস্ক বসানো হবে, সেই প্রত্যাশাও আমরা করছি। যেভাবেই হোক, পরিবর্তনের সুফল গ্রাহকদের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে বিআরটিএকেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হকদ র ব আরট এ র জন য গ র হক ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও সুলতান মাহমুদ।

আগামী ১১ ও ১৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ঠিক করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২০ জুলাই পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আদালতে বদলি হয়।

দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত এপ্রিলে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। তিনটি মামলায় তাঁদের ছাড়াও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।

পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ