হামজাদের হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে বার্নলি
Published: 22nd, April 2025 GMT
ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামলেও শেফিল্ড ইউনাইটেডকে হোঁচট খেতেই হলো। টার্ফ মুরে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বার্নলির কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় হামজা চৌধুরীর দল। এই জয়ে প্রিমিয়ার লিগে ফেরার টিকিট নিশ্চিত করেছে বার্নলি। দিনটিকে রাঙিয়েছে লিডস ইউনাইটেডও, যারা স্টোক সিটিকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষ লিগে জায়গা করে নিয়েছে।
চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে যেতে হলে টেবিলের শীর্ষ দুইয়ে থাকতে হয়। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই লিডস ও বার্নলি সে জায়গা পাকা করে ফেলেছে। ৪৪ ম্যাচে ৯৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে লিডস এখন শীর্ষে। বার্নলির সংগ্রহও সমান ৯৪ পয়েন্ট। শেফিল্ড ইউনাইটেডের পয়েন্ট ৮৬, ফলে বাকি দুই ম্যাচ জিতলেও তাদের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হবে ৯২। যা লিডস ও বার্নলিকে ছোঁয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
তবে শেফিল্ড ইউনাইটেডের প্রিমিয়ার লিগে ফেরার আশা এখনো টিকে আছে। চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থানে থাকা দলগুলো প্লে-অফে খেলবে, যেখান থেকে একটিমাত্র দল প্রিমিয়ার লিগে জায়গা পাবে। সেই প্লে-অফে খেলার সুযোগ আছে হামজাদের সামনে, যেখানে তাদের জিততে হবে টানা দুই ম্যাচ। কারা হবে প্রতিপক্ষ, সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি।
টার্ফ মুরে সোমবারের ম্যাচে বার্নলির জয়ের নায়ক জোশ ব্রাউনহিল। ম্যাচের ২৮ মিনিটে প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। যদিও ৩৭ মিনিটে শেফিল্ডকে সমতায় ফেরান থমাস ক্যানন। তবে বিরতির আগে, ৪৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ব্রাউনহিল, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে ম্যাচের নিষ্পত্তিমূলক গোল। শেফিল্ড এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে বার্নলি নিশ্চিত করে ফেলেছে ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে প্রত্যাবর্তন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।