গুম শিক্ষার্থীদের ফেরত দাবি জবি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির
Published: 23rd, April 2025 GMT
শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন, গুমের শিকার তিন শিক্ষার্থীদের ফেরতসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্কর্য চত্বরে আয়োজিত এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য, সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে একের পর এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার ক্রমেই বাড়ছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এ সময় তারা কুয়েট থেকে ৩৭ শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ জানান।
তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন করতে হবে; গুমের শিকার তিন শিক্ষার্থী ও সাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদল নেতাদের ফেরত দিতে হবে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সংগঠনের সদস্য নওশিন নাওয়ার জয়া বলেন, “একটার পর একটা বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটছে। অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র নিশ্চুপ। যারা আন্দোলনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই আজ বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদ ব্যক্তি নয়, এটি একটি ধারণা। যারা ফ্যাসিবাদে পরিণত হবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াবে।”
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ছেলেদের জন্য কোনো আবাসন নেই। আবাসন ছাড়া একটি শিক্ষার্থীর বিকাশ অসম্ভব। পারভেজ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দলমত নির্বিশেষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২৪৮ জন নারী শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। ছেলেদের জন্য কোনো আবাসন নেই। প্রতিদিন মেসে অমানবিক পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। অথচ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের চাওয়া উপেক্ষা করে লিফট স্থাপন করছে, যা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে আঘাত করে।”
তিনি আরো বলেন, “আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনের কার্যকরি কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষার্থীরা একের পর এক আন্দোলন করলেও প্রশাসনের গড়িমসি চলছেই।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল