ঢাকার ধামরাইয়ে ও গাজীপুরের শ্রীপুরের পোশাক শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে গতকাল বুধবার মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে উভয় এলাকায়ই ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

ধামরাই প্রতিনিধি জানান, ১৪ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রেডিসন ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে সুতিপাড়া এলাকায় কারখানার সামনে মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কারণ ছাড়াই বন্ধ, জিএমের পদত্যাগ, সন্ধ্যা ৭টার পর টিফিন, রাত ৯টার পর কাজ করলে নাইট বিল, টাকা কর্তন ছাড়া কারখানার গাড়ি সবাইকে ব্যবহার করতে দেওয়াসহ ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলরত শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, ১৪ দফা দাবি না মানলে কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক দাবির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এর পর শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে যান। তবে এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (আজ) শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন।  

এদিকে গাজীপুর প্রতনিধি জানান, শ্রীপুরে পৌরসভা এলাকার বহেরার চালা এলাকার নিট হরাইজন কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে  ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে ছয় কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য কর্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেয়।

শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, খবর পেয়ে থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেন সড়ক থেকে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ