ফ্যাসিবাদের বিচারকদেরও বিচার হতে হবে: রিজভী
Published: 26th, April 2025 GMT
ফ্যাসিবাদের বিচারকদেরও বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘তাদের বিচার নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে কেউ কোনো আদালতকে দিয়ে তার অশুভ ইচ্ছা ও অগণতান্ত্রিক নির্যাতন–নিপীড়ন মানুষের ওপর চালানোর সাহস পাবে না। এটাই হওয়া উচিত।’
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘যাঁরা এই ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন আদালত। বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আসাদুজ্জামান—(আছে) এ রকম অসংখ্য নাম।’
‘এঁরা সবচেয়ে নির্দোষ যে নারী, জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে, শত নিপীড়ন–নির্যাতন ভোগ করে জনগণকে ছেড়ে যাননি, মাটিকে ছেড়ে যাননি, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় আসাদুজ্জামান তাঁকে সাজা দিয়েছেন। সেই বিচারকেরা কেন শাস্তির আওতায় আসবেন না’, বলেন রিজভী।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময় হওয়া মামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা, সেই মামলা আট মাস চলে যাওয়ার পরও আদালতের সেলফে থাকার কথা ছিল না। অতি দ্রুত এ মামলাগুলোর নিস্পত্তি করতে হবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিচারক, তাঁদেরও বিচার হতে হবে। আমরা নুরেমবাগ ট্রায়ালে দেখেছি—হিটলারের আদালতের যাঁরা বিচারক ছিলেন, কোনো ধরনের যুক্তির কথা না শুনে হিটলারের কথায় লাখ লাখ কয়েদিকে পুড়িয়ে মারার যাঁরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বিচার করেছেন, তাঁদের বিচার হয়নি? তাঁদের যদি বিচার হতে পারে, তাহলে আজকে শেখ হাসিনার আমলের ফ্যাসিবাদকে যাঁরা প্রলম্বিত করেছেন, তাঁদের কেন বিচার হবে না। তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময় হওয়া মামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা, সেই মামলা আট মাস চলে যাওয়ার পরও আদালতের সেলফে থাকার কথা ছিল না। অতি দ্রুত এ মামলাগুলোর নিস্পত্তি করতে হবে।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যে দেশের জনসংখ্যা ৬০ লাখ নেই। অথচ বিএনপির ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
মাহাদী আমিনের এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রুহুর কবির রিজভী বলেন, ‘একটি দেশের জনসখ্যার চেয়ে বাংলাদেশে আসামির সংখ্যা বেশি। ডেনমার্কে ৫০ লাখ লোক বসবাস করেন। অথচ আমাদের দেশে বিএনপির ৬০ লাখের বেশি নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের সময় হওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের সব মামলা প্রত্যহার হলেও বিএনপি নেতা–কর্মীদের মামলাগুলো প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৬০ ল খ ন ব এনপ র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
টিউলিপের উচিত দেশে ফিরে আদালতের মুখোমুখি হওয়া
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে ফিরে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য সফরের সময় আইটিভি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারপ্রধান বলেন, যে কোনো অভিযোগ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে নয়, আইনানুগভাবে আদালতে মোকাবিলা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘যদি তার (টিউলিপ) বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তার আদালতে উপস্থিত হওয়া উচিত।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি টিউলিপের সঙ্গে কথা বলিনি। আমি এটিকে একটি আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়েছি এবং এটি আইনিভাবেই হওয়া উচিত। এখানে আমার জড়িত হওয়া উচিত নয়।’
টিউলিপের বিরুদ্ধে তাঁর খালা শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ এনেছে দুদক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান করার জন্য তাঁর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দেন যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক।
সাক্ষাৎকারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপের বৈঠকের অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন প্রধান উপদেষ্টা। টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবীরা এটিকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ দাবি করেছেন।
ড. ইউনূস সাক্ষাতে সাড়া না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে টিউলিপ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ড. ইউনূস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে অনীহা দেখিয়ে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল তথ্য প্রচারের পথে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ইন্ধন জুগিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে শোরগোল হয়েছে। এর মধ্যে টিউলিপ কিংবা তাঁর মায়ের (শেখ রেহানা) বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের প্লট নেওয়ার অভিযোগ দুদকে রয়েছে।