জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আজ রোববার রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানিয়েছে।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ এবং এই হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল। এর অধীনে থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মী জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবপরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থানের পরে এই প্ল্যাটফর্মের কাজ শেষ হলেও ইউনিয়ন পর্যন্ত এর কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম বাতিল চাচ্ছি।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনকে পুনর্বাসন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জনগণ এই চেষ্টা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই ছাত্রদল নেতা। এ সময় তিনি পারভেজ হত্যাকাণ্ডে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।

এ সময় জাহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো.

আবু হোরায়রা। ওই চারজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবাহান নিয়াজ (তুষার), টিঅ্যান্ডটি ইউনিট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসাইন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া হক ও ফাতেমা তাহসিন।

আবু হোরায়রা বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অনেক বেশি। এ কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘টার্গেট কিলিং’ করা হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক মহল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে এই হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে রাজনীতিতে আসতে না পারেন, অনেকে সে জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ সময় তিনিও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মটি বিলুপ্ত ঘোষণার দাবি জানান।

ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে নিহত জাহিদুল ইসলামের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।’

মানববন্ধনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সিদ্দিকী, সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক, শাহ নিয়াজ রাহাত, ফেরদৌস আহমেদ রুবেল, মোহাম্মদ সাকিব, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সোলায়মান কাদেরসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ব্যানারে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট প ল য টফর ম ছ ত রদল র ব সরক র ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩

নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।

আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু

ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু

বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।

রিমনের  মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।

রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।

এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি। 
 

ঢাকা/সুজন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্দোষ দাবি প্রতিপক্ষের, হয়নি মামলা
  • তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যেই সংস্কার রয়েছে, অচিরেই নির্বাচন দিন : সোহাগ
  • বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে তিতুমীরে মানববন্ধন
  • উত্তরায় বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের ভাইকে কোপানোর ঘটনায় মামলা, প্রতিবাদ কর্মসূচি
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কর্মসূচি, ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদককে নোটিশ