চারটি বড় সড়ক মিলিত হয়েছে একস্থানে। জায়গাটির নাম ‘বারো রাস্তার মোড়’। ঘন ঘন দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয়রা এটির নাম দিয়েছেন ‘মরণ রাস্তার মোড়’। সম্প্রতি ‘মরণ রাস্তার মোড়’ লিখে সেখানে ব্যানারও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে এই মোড়ে আবারো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর পরপরই স্থানীয়রা সড়কটি অবরোধ করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সড়কে বিক্ষোভ করেন। 

বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয়রা সড়কটির কিছু অংশ খুঁড়ে ফেলেন। পরে রাস্তার ওপর আগুন জ্বালিয়ে দেন তারা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যান তারা। স্থানীয়রা সেখানে গোলচত্বর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

স্থানটি নগরের চন্দ্রিমা থানার খুব পাশেই। ক্ষুব্ধ জনতাকে সরাতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। বারো রাস্তার মোড়ে দ্রুতই গোলচত্বর নির্মাণের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক ছাড়েন।

আরো পড়ুন:

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাসচাপায় নিহত ১

নড়াইলে মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, শিশু নিহত

আজ বিকেলে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুত্বর আহত হন মো.

আশরাফুল (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী থানার রণহাট এলাকায়। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, “রাস্তা এখন ক্লিয়ার আছে। আমরা ক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে সরিয়েছি। সেখানে আসলেই গোলচত্বর নির্মাণ প্রয়োজন। পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। তারা এটা করতে চেয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ওই রাস্তার মোড়টি এমন যে বড় কোনো যানবাহন ছোট যানবাহনকে দেখতেই পায় না। দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আবার সেখানে যতটা ধীরে গাড়ি চালানো উচিত, চালকেরা তা করেন না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আজ দুর্ঘটনার পর বাসটি পালিয়ে গেছে। স্থানীয়রাও বাসটিকে শনাক্ত করতে পারছেন না। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে চেনা যাবে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাসটিকে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন আহত দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক

অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।

বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।

সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।

কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।

একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।

 মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে