নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে খোলা জায়গায় রাখা পরিত্যক্ত মালামালের স্তূপে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। এতে পুরো হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বেলা সোয়া একটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

সরেজমিনে হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও রোহিঙ্গা ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী চলাচলের রাস্তার পূর্ব পাশে খোলা জায়গায় পুরোনো কিছু মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে ওই স্তূপে আগুন লাগে। আগুনে পরিত্যক্ত মালামালের পাশাপাশি হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি তার পুড়ে যায়। খবর পেয়ে মাইজদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্যরা এসে আগুন নেভান।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের যেসব পুরোনো মালামাল পুড়ে গেছে, তা আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মালামালগুলো নিলামে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ধারণা, কারও ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন লেগেছে। এরপরও আগুনের ঘটনার নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হবে।

হাসপাতালের এই তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, ‘আগুনে পাওয়ার হাউসের একটি তার পুড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রোগীরা সংকটে পড়েছেন। হাসপাতালের জেনারেটরটিও সকালে বিকল হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতে কাজ করছেন।’

জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ আগ ন ল গ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বিপুল ব্যয়ের প্রকল্প, তবু পানি মিলছে না

ওয়াসার পানি নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। অনেক স্থানে সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি ও চুরি। সিস্টেম লসের নামে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ৩০ শতাংশ পানি। নানা প্রকল্প নেওয়ার সময় অপচয় রোধে কর্মকর্তারা গালভরা যুক্তি তুলে ধরলেও মিলছে না সুফল। 

অপচয় বন্ধে পুরোনো পাইপ সরিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে নতুন পাইপ, লাগানো হচ্ছে স্মার্ট মিটার। এভাবে একের পর এক হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও সমস্যার আবর্তেই ঘুরপাক খেতে হয় গ্রাহককে। ওয়াসার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অসাধু মিটার রিডারদের চক্রের হাতে যেন বন্দি সবাই।                  

চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদনের সক্ষমতা ৫৬ কোটি লিটার। এর মধ্যে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে আসে ৯ কোটি লিটার, কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ এবং ২ থেকে আসে ১৪ কোটি লিটার করে। এ ছাড়া মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ৯ কোটি লিটার, গভীর নলকূপ থেকে ৪ কোটি লিটার পানি পাওয়া যায়। ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের সক্ষমতা হচ্ছে ৬ কোটি লিটার। তবে নানা কারণে প্রকল্পগুলো থেকে সক্ষমতা অনুযায়ী পানি পাওয়া যায় না। এর মধ্যে একটি বড় অংশ অপচয়ের নামে চুরি হয়ে যাচ্ছে। 

ওয়াসার হিসাব থেকে জানা যায়, দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪৭ কোটি লিটার বা ৪ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করে ওয়াসা। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ৫০০ কিউবিক মিটার পানি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ থেকে দৈনিক আয় হওয়ার কথা ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ কোটি ১৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ কিউবিক মিটার পানি আবাসিক গ্রাহকের কাছে ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে দৈনিক আয় হওয়ার কথা ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮০ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক ও আবাসিক মিলে পানি বিক্রি থেকে বছরে আয় হওয়ার কথা ৩৪৫ কোটি টাকা। ১০ শতাংশ হারে সিস্টেম লস বাদ দিলেও বার্ষিক আয় হওয়ার কথা ৩১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ মাসে এই খাতে আয় আসছে ১৯ থেকে ২০ কোটি টাকা। গড়ে মাসে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা হিসাব করলে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় ৭৭ কোটি টাকার।                    

বর্তমানে ওয়াসার প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১-এর অধীনে ৪৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২-এর অধীনে শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হয়। এ হিসাবে ৮৯৫ কিলোমিটার পুরোনো পাইপলাইন সরিয়ে নতুন পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। এসব পাইপলাইনের আওতায় ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রাহক আছেন। এবার ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৫৭৮ কোটি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা করবে ৭৪ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে নগরে আরও ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে লাগানো হবে ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটার। এর আওতায় আসবে ৪০ হাজার গ্রাহক। ওয়াসা বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। তাতে বাড়বে রাজস্ব আদায়।

ওয়াসার সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে পানির দৈনিক চাহিদা ৫৬ কোটি লিটার। ২০৩২ সালে হবে ৭০ কোটি লিটার। ২০৪০ সালে চাহিদা হবে ১২২ কোটি লিটার। পানির বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, উৎপাদিত পানির প্রায় ৩০ শতাংশ অপচয় হচ্ছ। অথচ বৈশ্বিক মানদণ্ডে এর স্বাভাবিক হার ৫ শতাংশের কম। রাজস্ব শাখার মিটার পরিদর্শকসহ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে সংস্থাটি বড় অঙ্কের রাজস্ব হারায় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও দুর্বলতার কারণে সংকট নিরসন করতে পারছে না সংস্থাটি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, উৎপাদিত পানির অপচয় বন্ধ করার পাশাপাশি গ্রাহকদের মধ্যে সুষম পানি বণ্টনে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় ম্যানুয়েল মিটার সরিয়ে এক লাখ স্মাট মিটার ও অটোমেটেড স্মাট মিটার লাগানো হবে। আগামী বছর এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। এটা বাস্তবায়ন হলে পানির অপচয় কমে আসবে। ইতোমধ্যে যেসব পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার সুফল হিসেবে আগের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ পানি অপচয় কমে এসেছে।’ 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ওয়াসার উৎপাদিত পানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নানাভাবে অপচয় ও নয়ছয় হয়। এটির একটি অংশ পাইপলাইন লিকেজের কারণে হয়, আবার চুরিও হয়। ম্যানুয়েল মিটারের কারণে পানি কমবেশি করা যায়। আবার বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগের মাধ্যমেও পানি চুরি হয়ে যাচ্ছে। অটোমেটেড স্মার্ট মিটার লাগানোর পাশাপাশি পুরোনো পাইপলাইন সরিয়ে নতুন পাইপলাইন স্থাপন এবং কঠোর কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া গেলে পানি অপচয় কিংবা চুরি বন্ধ হয়ে আসবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার কোরবানিযোগ্য প্রাণী ১ কোটি ২৪ লাখ, থাকবে উদ্বৃত্ত: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
  • ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারে দাম কমেছে ১৯ টাকা
  • বিপুল ব্যয়ের প্রকল্প, তবু পানি মিলছে না
  • গাজায় এখন একবেলার খাবার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব
  • স্বাদে অতুলনীয় ‌‘বর্নির ধুছনির দই’
  • ১ হাজার ২০০ মাইল পথ পাড়ি দিল চালকবিহীন ট্রাক
  • কমেছে চালের দাম
  • দাম কমেছে চালের, বেড়েছে সবজি-মাছ-মুরগির
  • ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফল গড়াবে বহুদূরে