নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পরিত্যক্ত মালামালে আগুন, বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন
Published: 4th, May 2025 GMT
নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে খোলা জায়গায় রাখা পরিত্যক্ত মালামালের স্তূপে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। এতে পুরো হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বেলা সোয়া একটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
সরেজমিনে হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও রোহিঙ্গা ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী চলাচলের রাস্তার পূর্ব পাশে খোলা জায়গায় পুরোনো কিছু মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে ওই স্তূপে আগুন লাগে। আগুনে পরিত্যক্ত মালামালের পাশাপাশি হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি তার পুড়ে যায়। খবর পেয়ে মাইজদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্যরা এসে আগুন নেভান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের যেসব পুরোনো মালামাল পুড়ে গেছে, তা আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মালামালগুলো নিলামে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ধারণা, কারও ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন লেগেছে। এরপরও আগুনের ঘটনার নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হবে।
হাসপাতালের এই তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, ‘আগুনে পাওয়ার হাউসের একটি তার পুড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ করে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রোগীরা সংকটে পড়েছেন। হাসপাতালের জেনারেটরটিও সকালে বিকল হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতে কাজ করছেন।’
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ আগ ন ল গ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি লবণের তথ্য পৌঁছেনি বিতরণে কারসাজির অভিযোগ
মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিং কর্তৃপক্ষকে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হলেও এ থেকে বঞ্চিত হয়েছে কয়েকটি এতিমখানা ও মাদ্রসা। যার কারণে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে ফড়িয়াদের হাতে পশুর চামড়া তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, যে পরিমাণ লবণ সরকার সরবরাহ করেছে, তা হয়তো যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে প্রাপ্ত লবণের পরিমাণ কম হতে পারে। এতগুলো মাদ্রাসা লবণের তথ্যই জানল না, এক দানা লবণও কেউ পেল না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দাবি, স্বল্পতার জন্য নয়, কারসাজির কারণেই বঞ্চিত হয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের রমজান আলী এতিমখানাটি উপজেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। ওখানে ৫২ জন এতিম শিক্ষার্থীর সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবার ঈদে ওই এতিমখানাটি ৩৬টি কোরবানির পশুর (গরু) চামড়া পেয়েছিল। সেই চামড়া সস্তার বাজারে আরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এতিমখানার পরিচালক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম আক্ষেপ করে বলেন, চামড়া সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন তারা। লবণের দামসহ অন্যান্য খরচের কথা চিন্তা করে পরে নামমাত্র দামে তা বিক্রি করে দেন পাইকারদের কাছে। সরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা দিতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হলেও তারা সেটি পাননি।
একই উপজেলার পৈলনপুর দারুল উলুম সাদিলুল রাশাদ মাদ্রাসার সুপার, উপজেলা কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দিন বলেন, তাঁর মাদ্রাসায় ২৩২টি গরুর চামড়া এসেছিল। লবণের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এতগুলো চামড়ার জন্য অনেক লবণ দরকার ছিল। সেই খরচ পোষাতে পারতেন না তারা। এই উপজেলার ৭৩টি কওমি মাদ্রাসার কোনোটিতেই সরকারের দেওয়া বিনা মূল্যের লবণ সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলার বাদাঘাট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া ঈদের পরদিন জনৈক ব্যক্তিকে ফোনে জানান, ৫০০ টাকা করে দিয়ে লবণ পেয়েছেন ৫০ বস্তা। তাঁর এ কথোপকথনের রেকর্ড আছে।
রোববার বিকেলে স্বপন মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে ৫০ বস্তা লবণ বিনামূল্যেই দিয়েছেন। লেবার ও নৌকা খরচসহ ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তাঁর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ১৫০ বস্তা লবণ তাঁর উপজেলার জন্য দেওয়া হয়েছিল। এই লবণ সব মাদ্রাসায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। দোয়ারাবাজার ইউএনও অরূপ রতন সিংহ বলেন, সরকারের বিনামূল্যের লবণ পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পরিষদকে কাজে লাগানো হয়েছে। পরিবহন সুবিধার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের ব্যবসা বাণিজ্য শাখার একজন কর্মচারী জানান, লবণ প্রতিটি উপজেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। পরিবহন খরচসহ হিসাব করে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সুনামগঞ্জের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আফিক্স বলেন, সুনামগঞ্জে ৩০ হাজার ৪৮৯টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এজন্য সরকার বিনামূল্যের ১২০ টন লবণ সরবরাহ করেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানালেন, এই লবণ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন চামড়া সংরক্ষণে রাখা সম্ভব হবে।