চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের এবার আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। ১৯ মে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। প্রথম আলোকে গত সোমবার খবরটি নিশ্চিত করেন চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের প্রযোজক ইফতেখার মুনিম। আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির খবরে গত সোমবার ফেরদৌস আরা জানান, এটি তাঁর জন্য সম্মানজনক, একই সঙ্গে আগামী দিনের কাজের প্রেরণা।

কথা প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বললেন, ‘শুধু সংগীত নিয়ে আমাদের এখানে কোনো আয়োজন হয় না। রবীন্দ্র, নজরুল, শাস্ত্রীয়, আধুনিক, চলচ্চিত্রের গানসহ সংগীতের বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়াটা চ্যানেল আই ২০ বছর ধরে রেখেছে। চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড সংগীতের নানা শাখার মানুষদের সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে সংগীতাঙ্গনের সবাইকে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করে। যে দেশে সংস্কৃতি ও সংস্কৃতিজনকে প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হয়, সেখানে এই ধরনের সম্মাননা এই অঙ্গন ও অঙ্গনের মানুষদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। এবার সেই আয়োজনে আমাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে, এই সম্মাননা আমার কাজের গতি আরও বাড়াবে মনে করছি।’

ফেরদৌস আরা এ বছর একুশে পদকও পেয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বললেন, ‘অনেকে বলেছেন, আমি দেরিতে একুশে পদক পেয়েছি; কিন্তু আমি বলতে চাই, আমার জন্য নির্ধারিত সময়ে তা এসেছে। তবে আমি বরাবরই শিল্পীদের জীবদ্দশায় এবং কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় পুরস্কার প্রদানের পক্ষে। কারণ, পুরস্কার পাওয়ার পর শিল্পী যেন তাঁর শিল্পকর্ম দিয়ে সমাজে আরও অবদান রাখতে পারেন। সমাজকে আলোকিত করায় ভূমিকা রাখতে পারেন। আমি মনে করি, চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে আজীবন সম্মাননাও আমার ঠিক সময়ে পাওয়া হচ্ছে। এতে আমার আগামী দিনের কাজ আরও ভালো করে করার দায়িত্ব বাড়বে। এখনো আমি গাইতে পারছি। ছেলে–মেয়েদের শেখাচ্ছিও। যাদের শেষ সময়, গাইতে পারছেন না বা মারা গেছেন, তাদের পুরস্কার দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এতে হয়তো দায় এড়ানো হয়; কিন্তু শিল্পীকে ঠিকঠাক সম্মান জানানোটা হয় বলে আমার মনে হয় না।’

ফেরদৌস আরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ