যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান তা একাধিকবার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি  বলেছেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এর ‘যথাযথ ও উপযুক্ত’ জবাব দিচ্ছে।

শনিবার রাত ১১টার কিছুক্ষণ আগে নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি–সংক্রান্ত যে সমঝোতা হয়েছে পাকিস্তান তা বারবার লঙ্ঘন করছে। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ‘যথাযথ ও উপযুক্ত’ জবাব দিচ্ছে।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আর ভারতের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি এএফপি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, বিক্রম মিশ্রি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আমরা পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এবং দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।’ তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কঠোর নজর রাখছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা পুনরায় ঘটলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে।’

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে শনিবার রাতে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারত সরকারের একটি সূত্র অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। শ্রীনগরে বার্তা সংস্থা এএফপির কর্মীরা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্ট লিখেছেন, ‘সবে হওয়া যুদ্ধবিরতি কি তবে ছাইয়ে পরিণত হলো? শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।’

আরও পড়ুনভারত যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, তবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে: ব্রিফিংয়ে সামরিক মুখপাত্র৪ ঘণ্টা আগে

শ্রীনগর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং জম্মুর আকাশে রাতের বেলায় গোলাবারুদ ও ঝলকানি দেখা গেছে, যা শুক্রবারের সন্ধ্যার ঘটনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ভারত ও পাকিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার এক্স হ্যান্ডলে এ কথা জানান। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আলাদা করে তা নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন শ র নগর

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত