গত ২০ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির সঙ্গে সিপিবি ও বাসদের বৈঠকটি অনানুষ্ঠানিক হলেও সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিল। এর একটা কারণ, দীর্ঘদিন পর প্রায় বিপরীত মেরুর দু’পক্ষের একসঙ্গে বসা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সিপিবি-বাসদ নেতারা বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।

উপলক্ষ চায়ের আমন্ত্রণ রক্ষা। এর পর ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে অনেক চেষ্টা করেও বাম জোটকে বিএনপি সঙ্গে পায়নি। এক পর্যায়ে ওই জোটের দুটি দল গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে গেলেও বাম জোটের বাকিরা শাসক শ্রেণির দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে সমদূরত্ব নীতি রক্ষা করে গেছে। এমনকি গত জুলাই-আগস্টের সরকার পতনের সফল আন্দোলনেও তারা নিজেদের মতো রাস্তায় থেকেছে।

সাম্প্রতিক বৈঠকটি যে সময়ের দাবি পূরণের চেষ্টা, সেটাও অনেকে বলেছেন। সময়ের দাবিটা হলো, দেশকে দ্রুত গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া, যা কেবল একটা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শিগগির এ দাবি পূরণ হচ্ছে না।

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত। এ মুহূর্তে দেশের প্রধান দল ধরা হচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিকে। তাদের মধ্যে কেবল বিএনপিই ডিসেম্বর বা তারও আগে নির্বাচন চায়। অন্যরা মনে করে, নির্বাচন বিলম্বে হলেও ক্ষতি নেই। আর এ সুযোগে অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বাচন ছাড়া অন্য সব কিছুতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিএনপি গত চার মাসে অন্তত দু’বার সরকারপ্রধানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছে। সরকার তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না।

এই যে সম্প্রতি সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করল এবং তার সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে দিল, তাতে বিএনপির সমর্থন থাকলেও দলের নেতারা নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন। ১২ মে সমকালের এক প্রতিবেদনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন– ‘আওয়ামী লীগের বিচার করতে কতদিন লাগবে? বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কি নির্বাচনও হবে না? কোনো পক্ষ যদি এমন দাবি তোলে– বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। তাহলে কি সরকার তাও মেনে নেবে?’

স্পষ্টত, এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে দলটি সোচ্চার হলেও কীভাবে এ দাবি আদায় হবে, বিএনপি তার পথ পাচ্ছে না। দেড় যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে অবস্থানকারী বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একা এ দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের দীর্ঘ সময়ের মিত্রদের শত্রু হতে চাচ্ছে না দলটি। মনে রাখতে হবে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ভোটব্যাংক প্রায় একই। তাই দলটি এখন নতুন মিত্রের সন্ধানে। সেখানে যদি বাম দলগুলোকে কাছে পায়, নেহাত ছোট অর্জন হবে না।

সত্য– ভোটের মাঠে বাম দলগুলো বড় শক্তি নয়। তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তির ঔজ্জ্বল্যও কালের পরিক্রমায় কিছুটা ম্লান। তদুপরি, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে উদারমনা মানুষদের একটা অংশকে যদি বাম দলগুলো সঙ্গে পায়, অন্তত নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে সেটা ফ্যাক্টর হতে পারে। মোদ্দা কথা, একসঙ্গে ভোট না করলেও, একসঙ্গে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামলে বিএনপি ও বাম জোট ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা কম।

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০ এপ্রিলের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছিলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে কীভাবে গ্রেটার ঐক্য করা যায়, সে ব্যাপারে সিপিবি, বাসদসহ বাম ধারার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়।’ (বণিক বার্তা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫)। এ নিয়ে তখন সিপিবি ও বাসদ নেতারাও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারাও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে বিএনপির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন। 

বিস্ময়কর হলো, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের প্রশ্নটি তাদের জোটে আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে বলে তখন সিপিবি ও বাসদ নেতারা বললেও এর কোনো ফলোআপ আজও দেখা যায়নি। ওই বৈঠক নিয়ে ২৪ এপ্রিল এই স্তম্ভে আমি বিএনপির উল্লিখিত দুর্বলতা তুলে ধরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম যে, বাম জোট এগিয়ে না এলে ওই উদ্যোগ হয়তো আর এগোবে না। সেই আশঙ্কাই কি সত্য হতে চলল?

নির্বাচন নিয়ে যৌথ আন্দোলনে বাম জোটের এগিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, একমাত্র বাম জোট স্পষ্ট ভাষায় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের দাবি তুলেছে। উপরন্তু, দু’পক্ষই প্রায় একই সময়ে নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছিল। তা গণতন্ত্রপ্রত্যাশী মানুষের কাছে বামদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিত। কিন্তু শিগগিরই তা হচ্ছে বলে মনে হয় না।

মনে আছে নিশ্চয়, গত মার্চে  মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশব্যাপী যে বিক্ষোভ হয়, তাতে বাম দলগুলোর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দেশে তখন আরও বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসবের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে অন্য বাম সংগঠনও লাগাতার কর্মসূচি পালন করে। এসব থামাতে অন্তর্বর্তী সরকার এমনকি হামলা-মামলার আশ্রয় নেয়। ওই আন্দোলনে বাম দল ও সংগঠনগুলোর ভূমিকা এতটাই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যে, রাজনৈতিক ময়দানে তখন প্রায় মার্চ মাসজুড়ে বামপন্থিদের প্রাধান্য থাকে। এর আগের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনেও বামপন্থিরা প্রধান ভূমিকা রাখে। যে আন্দোলনের ফলে সরকার শেষ পর্যন্ত  অনেকাংশেই পিছু হটে।

আমার বিশ্বাস ছিল, বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে হলেও বামপন্থিরা এ ‘মোমেন্টাম’ ধরে রাখবে, যেখানে নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারত। জানা মতে, সিপিবি ও বাসদ এ বিষয়ে বেশ আন্তরিক হলেও জোটের মধ্যে বিশেষত ইস্যুর গুরুত্ব সম্পর্কে ভিন্নমত আছে। তেমনটা হলে সেটাও সামনে আনা উচিত। কথা হলো, একেক দিন একেকটা ইস্যু নিয়ে মাঠে লেফট-রাইট করার চেয়ে সুনির্দিষ্ট দু-একটা জাতীয় ইস্যুতে সম্ভাব্য সব মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মাঠে থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফলদায়ক। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে কার্যকর একটা ইস্যু।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ব ম দলগ ল ড স ম বর ব মপন থ ব ম দল র একট সময় র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কিছু রদবদল করা হতে পারে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই (ফিট লিস্ট) করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজটি শেষ হলেই তাঁদের পরিবর্তন করা হতে পারে। বাছাইয়ের কাজটি শেষ হতে পারে এই মাসের মধ্যে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন রয়েছে, তাই মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের পদে আনার চেষ্টা চলছে। এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। বাছাই তালিকা তৈরির জন্য ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।

বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। এক–এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭–০৮) আমলে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সরকারি ভাষ্য—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা আছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই এ প্রস্তুতির কাজ চলছে।

বিগত সরকারও নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনেক জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন এনেছিল। অবশ্য গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। তবে এ নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তারা হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।যেসব জেলায় পরিবর্তন হতে পারে

২১ জেলায় বর্তমানে যাঁরা ডিসির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা গত মার্চে উপসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তবে ডিসির পদটি উপসচিব পদমর্যাদার। ফলে এই জেলাগুলোতে বদলির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

এই জেলাগুলো হলো—হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।

এ ছাড়া আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। ফলে এই জেলায় নিয়মিত ডিসি নেই। স্বাভাবিকভাবে এই জেলাতেও পরিবর্তন আসবে।

জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে, সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।মো. মোখলেস উর রহমান, সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। সামনে হয়তো ৪-৫ জন ডিসি বদল হতে পারে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে অবিলম্বে একজন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া বাছাই তালিকা হয়ে গেলে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন ডিসি দেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাতে বিতর্কের সুযোগ না থাকে সে জন্য খুব নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পেশাদার ও সর্বোচ্চ যোগ্য লোককে বাছাই করা হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করাও একটি কঠিন কাজ। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে জুলাইয়ের মধ্যেই বাছাই কাজ শেষ করা হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে।ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন কি না, স্পষ্ট নয়

জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তবে আগামী নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী এনে সম্প্রতি ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন।

আগে ইসির কর্মকর্তারাই এ কাজটি করতেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ইসি প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের এই কাজে যুক্ত করেছিল, যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইসির কর্মকর্তাদের হাতে।

অবশ্য বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তাই নির্বাচনী দায়িত্বে থাকতে অনিচ্ছুক। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর অনেক সময় বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলেই ঢালাওভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরের মতো সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হয়। অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। পদোন্নতিতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত হলে দায়িত্ব পালন ছাড়া উপায়ও থাকে না।

আগে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করত, ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের সময় পছন্দের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে বসিয়ে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও এবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যারা মাঠে আছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সহ জেলার প্রায় সব সরকারি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ডিসিরা। এসব পদের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ওপরই জেলার অনেক কিছু নির্ভর করবে। ফলে কেবল নির্বাচন নয়, সব সময়ের জন্যই ডিসি ও এসপির মতো পদগুলোতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ