মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বাকি তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।

অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২১ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হলো।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

৬ মার্চ ঘটনার দিন থেকে গণনা করলে ৭৩ দিনের মাথায় আজ এ মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। এর মধ্যে তদন্ত শেষে পুলিশ ৩৭ দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

আরও পড়ুনমাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় আজ১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমাগুরা শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম ২১ দিনে শেষ, রায় শনিবার১৩ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশা নয়, বন্ধ হচ্ছে জীবন

ঢাকার রাজপথে এখন এক ভিন্ন দৃশ্য। কোথাও একঝাঁক পুলিশ, কোথাও জব্দকৃত অটোরিকশা, কোথাও আবার ফাঁকা রাস্তায় এক কোণে বসে থাকা একজন রিকশাচালক, যার চোখে আতঙ্ক, মুখে ক্লান্তি, আর বুকভরা প্রশ্ন— ‘এখন কী করবো?’ এই প্রশ্ন শুধু তার নয়, তার পরিবারের, তার সন্তানের, এবং শেষ পর্যন্ত পুরো সমাজের। কারণ প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরেকটি বৃহত্তর গল্প।

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা মানুষের ওপর নির্ভরশীল। এই খাতের অন্তর্ভুক্ত অগণিত অটোরিকশা চালক জীবিকা নির্বাহ করেন প্রতিদিনের আয়ে। অনেকেই গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন শুধু রিকশা চালিয়ে পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার আশায়। কেউ হয়তো কৃষি ছেড়ে এসেছেন, কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিটেমাটি হারিয়ে শহরে পাড়ি দিয়েছেন এই আশায়—একটা গাড়ি চালিয়ে অন্তত সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারবেন।

কিন্তু সম্প্রতি পুলিশি অভিযানে ঢাকার অনেক এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জব্দ, জরিমানা এবং চালকদের হয়রানির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। উদ্দেশ্য অবৈধ যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো। উদ্দেশ্যটি অবশ্যই জরুরি, তবে প্রশ্ন হলো, প্রয়োগের পদ্ধতি কতটা মানবিক?

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার চালক ঘরে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। একজন চালকের কথায়, ‘রাতে ফিরি, বউ বলে বাজার আনোনি কেন? কী বলবো তাকে? পুলিশ গাড়ি নিয়ে গেছে—এই কথা বললে তো ক্ষুধা মেটে না।’

রিকশা বন্ধ মানে শুধু যান চলাচল বন্ধ হওয়া নয়, একেকটি পরিবারের রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া, এবং অনেক ক্ষেত্রে মানবেতর জীবন শুরু হওয়া। প্রশ্ন ওঠে, যদি এই যানগুলো অবৈধ হয়ে থাকে, তাহলে এতদিন কীভাবে সেগুলো চলে এসেছে? কারা এই যানবাহন আমদানি করেছিল, কারা এগুলোর পেছনে বিনিয়োগ করেছে? চালকেরা তো কেবল একটি ব্যবস্থা পেয়ে তাতে যুক্ত হয়েছেন, কেউ অবৈধ ব্যবসা করতে নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য।

এছাড়াও, পুলিশের অভিযান অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্যহীন ও হঠাৎ করে হয়, যাতে চালকেরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা ছাড়া বা বিকল্প কোনো কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই যেভাবে অভিযান চলছে, তাতে দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমস্যার সমাধান অবশ্যই জরুরি। তবে তা হতে হবে সুচিন্তিত, ধাপে ধাপে এবং মানুষের জীবিকা রক্ষা করে। সেক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা হলো: 

ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ: একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে অটোরিকশা চলাচল ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, যাতে চালকেরা প্রস্তুতি নিতে পারেন।

আলাদা রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈধতা প্রদান: একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া চালু করে বৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স প্রদান এবং অপ্রয়োজনীয় যানবাহন বন্ধের ব্যবস্থা।

পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান: সরকার বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ট্রেনিং ও ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যারা রিকশা চালাতে পারবেন না, তারা যেন অন্য কোনো কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারেন।

অভিযান পরিচালনায় মানবিকতা: প্রতিটি অভিযান চালানোর আগে সামাজিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি মানবিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

আমরা উন্নয়নের কথা বলি, উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু সে স্বপ্ন তখনই পূর্ণতা পাবে যখন শহরের প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষগুলোকেও সে স্বপ্নে অংশীদার করা হবে। উন্নয়নের মূল দর্শন হওয়া উচিত—কাউকে পিছনে ফেলে নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

এখন সময়, আমরা যেন শুধু সড়কের শৃঙ্খলা নয়, সমাজের শৃঙ্খলাও নিশ্চিত করি। তাদের জীবনের চাকাও যেন ঘুরতে পারে, সম্মানের সঙ্গে, নিরাপদে। শহরের শৃঙ্খলা জরুরি, কিন্তু মানুষের জীবিকার পথ বন্ধ করে সেই শৃঙ্খলা অর্জন টেকসই নয়। আইন বাস্তবায়নের চেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা যদি সত্যিই একটি মানবিক রাষ্ট্র চাই, তবে এখনই সময়, রিকশাচালকদের জীবনে মানবতার আলো পৌঁছে দেওয়ার।


লেখক: সাংবাদিক 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় মাহিন্দ্র-লরির সংঘর্ষে নিহত ৩
  • কেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন
  • মৃত সন্তানকে নিয়ে গুলতেকিন খানের আবেগঘন পোস্ট
  • ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: কিছু প্রশ্ন ও প্রস্তাব
  • আরিফ-মুক্তাদিরের আসনে জোবাইদার পোস্টার
  • মেক্সিকোতে টিকটকে লাইভ করার সময় তরুণীকে গুলি করে হত্যা
  • দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে পুতিন ও আনোয়ার ইব্রাহিমের রসিকতা
  • সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: ইসলামের সঙ্গে কি সাংঘর্ষিক?
  • অটোরিকশা নয়, বন্ধ হচ্ছে জীবন