অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম বাধা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, এ দেশের উন্নয়নে প্রয়োজন সামাজিক মূলধন। সামাজিক মূলধনের ভিত্তি হলো– একে অপরের প্রতি বিশ্বাস। বিশ্বাস তৈরির কাজ নাগরিক সংগঠনের হলেও, তারাই মতপার্থক্য তৈরি করছে।

গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া : ভবিষ্যৎ সহযোগিতামূলক সম্পর্কের পথ’ শীর্ষক কান্ট্রি লেকচারে এসব কথা বলেন ড.

আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)।

অনুদানভিত্তিক অংশীদারিত্ব থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদার হতে চায় জানিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দাতাদের পার্থক্য হলো– তাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব অন্যদের থেকে আলাদা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চাচ্ছে, যা আমাদের জন্য ভালো। এতে প্রযুক্তি বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। কোরিয়াকে বলব, ঋণের বদলে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে আসতে। আপনারা বাংলাদেশে মেট্রোরেলে আগ্রহী, এতে বিনিয়োগ করুন। এ থেকে মুনাফা নিন, প্রযুক্তি হস্তান্তর করুন, কোচগুলো (বগি) বাংলাদেশে নির্মাণ করুন। আসুন, সম্পর্কের ধরন পাল্টে ফেলি।

ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। স্যামসাং ২০০৯ সাল থেকে মোবাইল ফোন, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর তৈরি করছে। হুন্দাই ও কিয়া মোটরস অ্যাসেমব্লি প্লান্ট তৈরি করেছে। এলজি বাটারফ্লাই টিভি, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করছে। ২০২৩ সালে কোরিয়া থেকে প্রায় ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু এখানে বিনিয়োগে কিছু বাধা আছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পৃথিবীর সব দেশ একই ধরনের সুবিধা দেয় জানিয়ে পার্ক ইয়ং সিক বলেন, বাংলাদেশে ভিসা প্রাপ্তি, কাস্টসম ক্লিয়ারেন্স, যৌক্তিক কর ও শুল্ক হার, লাভের টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয় উন্নত করতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্পে ১৯৭৯ সালে প্রথম কোরিয়ান কোম্পানি বিনিয়োগ করেছিল। এ খাত দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

পার্ক ইয়ং সিক জানান, ২০০৮ থেকে এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের অধীনে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী কোরিয়ায় গেছে। ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কোম্পানিগুলো চাইলে (অন্য জায়গায় চাকরি না নেন), এ সংখ্যা আরও বাড়বে। যেসব শ্রমিক টাকা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা নিয়ে ফেরত আসেন, তারা নিজ দেশে ব্যবসা শুরু এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে জানান তিনি।

বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ