বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড. আনিসুজ্জামান
Published: 29th, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, “সরকার পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের মতামতগুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি'র মাল্টিপারপাস হলে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ড.
আরো পড়ুন:
চবিতে বিআইসিএমর বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত, এমওইউ স্বাক্ষর
এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ১০০ শতাংশ
এবাই প্রথম পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে সরকার। এতে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বিএসইসি'র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, কমিশনার মো. আলী আকবর এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাগণ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় বিষয় উঠে আসে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট নিরসনে নতুন ফান্ড আনয়ন ও সরকারের পুঁজিবাজার সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ, অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স ও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফকরণ, পুজিবাজারে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ও কোম্পানিগুলোকে আরো দায়বদ্ধ করা, পুঁজিবাজারে সব অনিয়ম-কারসাজির বিরুদ্ধে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রেখে সংস্কার বাস্তবায়ন, পুঁজিবাজারের প্রতি সবার আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, বাইব্যাক আইন বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ, ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর অনিয়মসমূহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিকাশ ও উন্নয়ন, পুঁজিবাজারে ভালো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এবং ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণ, গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সাধন, বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পুজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান, ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা ও যথার্থতা নিশ্চিতকরণে অডিটরের দায়িত্ব নিরূপণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রণোদনা প্রদান, আইসিবি'র বাজার সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজারের সকল স্তরে দক্ষতা-পেশাদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সংযোগ বৃদ্ধি, বিএসইসিতে পরামর্শ বক্স স্থাপন ও সময়ে সময়ে মতবিনিময় সভা আয়োজন ইত্যাদি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সভায় ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনারবৃন্দ বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বিভিন্ন মতামত এবং প্রশ্নের জবাব দেন।
বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে সরকার ও বিএসইসির পক্ষ হতে আশ্বস্ত করা হয়। সভায় বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ তথা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এ ধরণের সংযোগের ফলে আগামীতে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে বিএসইসি আশা করে।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
দেশের পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড পলিসি রিকমেন্ডেশনস’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশনে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন, কমেছে লেনদেন
তহবিলের অপব্যবহার: বিএসইসির তদন্তের মুখে বেক্সিমকোর ২ বন্ড
বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, নুরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। আর বিএসইসি থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
যৌথ কমিটির প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় করণীয় নিয়েও বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে এসময় কিছু নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের ওপর এসময় গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসঙ্গে যৌথ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও কমিটি জাতীয় পরিসরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ এবং বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সেমিনার আয়োজনের সুপারিশ করেছে। কমিটির মতে, ‘সকলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে বন্ড মার্কেট ও পুঁজিবাজারকে ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার ও প্রসার করা জরুরি।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অনুষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে সদ্ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।
যৌথ কমিটি জানায়, ‘বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে গত ১১ মে তার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজারের সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং উন্নয়নে করণীয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দেন, যার মধ্যে ‘দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অন্যতম। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম শুরু করেছে। গঠিত যৌথ কমিটিও এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন বেগবান হবে বলে বিশ্বাস করছে সংস্থাটি।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ