সৌরজগৎ বলতে আমরা অনেকেই শুধু সূর্য ও তার চারপাশে ঘূর্ণমান আটটি গ্রহের সমষ্টিকে বুঝি। গ্রহ, উপগ্রহ, বামন গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ও আন্তঃগ্রহ ধূলিকণার এক বিশাল পরিবার নিয়ে গঠিত হওয়ায় সৌরজগতের প্রতিটি অঞ্চলেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। এটি সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধারণ করছে। সূর্য তার শক্তিশালী মহাকর্ষীয় আকর্ষণের মাধ্যমে অন্যান্য সব বস্তুকে কক্ষপথে ধরে রেখেছে। সূর্য মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের একটি বিশাল জ্বলন্ত গোলক। এখানে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলো ও তাপ উৎপন্ন হয়। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গ্রহ সূর্যকে ঘিরে রেখেছে। এসব গ্রহকে টেরেস্ট্রিয়াল প্ল্যানেটস বলে। সূর্যের নিকটতম চারটি গ্রহ হচ্ছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। এসব গ্রহ পাথুরে ও তুলনামূলকভাবে ছোট। এদের কঠিন পৃষ্ঠ, সিলিকেট শিলা ও ধাতব কোর রয়েছে।
বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের এবং সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এর কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই ও ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি ও রাতের তাপমাত্রা খুব কম। ঠিক পরেই আছে শুক্র গ্রহের অবস্থান। এখানে ঘন কার্বন ডাই–অক্সাইড সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে। একটি উত্তপ্ত ও আগ্নেয়গিরিপ্রবণ গ্রহ শুক্র গ্রহ। শুক্র গ্রহ সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ আর এর কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। শুক্র গ্রহের পরেই পৃথিবীর অবস্থান। এটিই একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানা যায়। পৃথিবীর তরল পানি, অক্সিজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল ও একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ রয়েছে। ঠিক পরেই মঙ্গল গ্রহের অবস্থান। রুক্ষ, লালচে পৃষ্ঠ ও পাতলা বায়ুমণ্ডলের একটি শীতল গ্রহ মঙ্গল গ্রহ। এর দুটি ছোট প্রাকৃতিক উপগ্রহ ফোবস ও ডিমোস।
মঙ্গল গ্রহের ঠিক পরেই বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান। মঙ্গল ও বৃহস্পতি কক্ষপথের মাঝের অঞ্চলে লাখ লাখ পাথুরে ও ধাতব বস্তু সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। এদের আকার কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক শ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বামন গ্রহ সেরেস এই বেল্টের বৃহত্তম বস্তু। এই বেল্টের পর থেকেই সৌরজগতের বাহ্যিক গ্রহের অবস্থান। এরা গ্যাস জায়ান্টস হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ আকারে বেশ বিশাল ও গ্যাসীয়। এদের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এরা মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে গঠিত। এদের সবারই নিজস্ব বলয়ব্যবস্থা ও অসংখ্য প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে।
বৃহস্পতি গ্রহ সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ, যার শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র ও ৭৯টিরও বেশি পরিচিত উপগ্রহ রয়েছে। আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো চারটি বড় উপগ্রহ ঘুরছে বৃহস্পতিকে ঘিরে। ঠিক পরেই শনি গ্রহের অবস্থান। এটি সুবিশাল ও দৃশ্যমান বলয়ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। শনির ২৭৪টিরও বেশি পরিচিত উপগ্রহ রয়েছে। টাইটান এদের বৃহত্তম ও এখানে মিথেনের হ্রদ রয়েছে।
এরপরেই ইউরেনাস নামের বরফের দৈত্যকার গ্রহের অবস্থান। গ্রহটি নিজের কক্ষপথে কাত হয়ে আছে। ইউরেনাসের ২৭টি পরিচিত উপগ্রহ রয়েছে। এরপরেই নেপচুন গ্রহের অবস্থান। এটি সৌরজগতের দূরতম গ্রহ। এখানকার শক্তিশালী ঝোড়ো বাতাসের তথ্য জানা যায়। এ ছাড়া ১৪টি পরিচিত উপগ্রহ রয়েছে নেপচুনের। যার মধ্যে ট্রাইটন বৃহত্তম ও বিপরীত দিকে ঘোরে বলে জানা যায়।
আরও পড়ুনসৌরজগতের নবম গ্রহের খোঁজে নতুন তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ২০ মে ২০২৫নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে অবস্থিত বরফ ও পাথরের ছোট ছোট বস্তুর একটি বিশাল চাকতি কুইপার বেল্ট। বামন গ্রহ প্লুটো, হাউমিয়া ও মেকমেক এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সদস্য। ধারণা করা হয়, অনেক ধূমকেতুর উৎপত্তি এই কুইপার বেল্টেই। এরপরেই অবস্থান একটি ছড়ানো চাকতির। কুইপার বেল্টের বাইরে অবস্থিত বরফের বিভিন্ন বস্তুর একটি বিক্ষিপ্ত অঞ্চল এটি। বামন গ্রহ এরিস এই অঞ্চলের বৃহত্তম বস্তু। এটি প্লুটোর চেয়েও বড়। এরপরেই ওর্ট মেঘ নামের বিশেষ অঞ্চলের অবস্থান। সৌরজগতের একেবারে প্রান্তে আছে বিশাল গোলাকার মেঘ, যা ওর্ট মেঘ নামে পরিচিত। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৫ হাজার থেকে ১ লাখ জ্যোতির্বিদ্যা একক দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। দীর্ঘ যাত্রার ধূমকেতুর উৎস এই ওর্ট মেঘ বলে মনে করা হয়। এর অস্তিত্ব সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। বিভিন্ন গাণিতিক মডেল ও ধূমকেতুর গতিবিধি থেকে ওর্ট মেঘের ধারণা পাওয়া যায়।
এ ছাড়া সৌরজগতে অসংখ্য ধূমকেতু রয়েছে। এসব ধূমকেতু বরফ, ধুলা ও গ্যাসের মিশ্রণে তৈরি। সূর্যের কাছাকাছি এলে লেজ তৈরি করে। এ ছাড়া রয়েছে অগণিত উল্কা ও উল্কাপিণ্ড। এসব গ্রহাণু বা ধূমকেতুর অংশ। বিভিন্ন এলাকায় আন্তঃগ্রহ স্থানে অত্যন্ত ক্ষীণ গ্যাস ও ধূলিকণা বিদ্যমান বলে জানা যায়।
আরও পড়ুনসৌরজগতের কোন গ্রহ কীভাবে ঘুরছে২৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক র গ রহ স রজগত র গ রহ স র ওর ট ম ঘ ঠ ক পর ই এরপর ই ন গ রহ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাড়ের ব্যথা সারানোর ব্যায়াম
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনুভব করছেন, ঘাড়টা এক পাশে নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। কোনো পেশিতে একটা টান লেগে আছে, যার জন্য নাড়াতে গিয়ে শক্ত লাগছে। ঘাড় এপাশ-ওপাশ করতেও কষ্ট হচ্ছে। এমন হঠাৎ ঘাড়ব্যথা বা ঘাড়ে টান লেগে যাওয়ার মতো সমস্যায় অনেকেই ভোগেন।
হঠাৎ এমন সমস্যা দেখা দিলে ঘরোয়া চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে প্রথমে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। সারা দিনে দুই বেলা বা তিন বেলা ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে গরম সেঁক পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধও সেবন করা যেতে পারে যেমন, পেশি শিথিলায়নের বা ব্যথানাশক, এটা সাময়িক সমাধান।
তবে যাঁরা প্রায়ই এমন সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা নিয়মিত কয়েকটা ব্যায়াম করতে পারেন, যেগুলো এমন ব্যথা এড়াতে দারুণ কার্যকর। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো থাকা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন, প্রচণ্ড ব্যথা থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যথা একটু কমলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।
সহজ তিন ব্যায়াম
১ এই ব্যায়াম বসা বা দাঁড়ানো উভয় অবস্থায় করা যাবে। প্রথমে ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখুন। এরপর থুতনি নামিয়ে আনুন বুকের কাছাকাছি। এ অবস্থায় ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর ঘাড়ের পেশি শিথিল করে ধীরে ধীরে মাথা ওপরে তুলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এবার থুতনি ওপরের দিকে তুলুন যতটা সম্ভব। এ অবস্থায় ১০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর আবার শুরুর অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন। এভাবে রোজ এক বেলা নির্দিষ্ট সময়ে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন।
২ এই ব্যায়াম করতে হবে দাঁড়ানো অবস্থায়, পা দুটো সামান্য ফাঁক রেখে। হাত দুটি দুই পাশে ঝোলানো অবস্থায় রাখতে পারেন। প্রথমে ডান দিকে মাথা কাত করুন, কান দিয়ে কাঁধ ছুঁতে চেষ্টা করুন। ঘাড়ের পেশিতে টান অনুভব করা পর্যন্ত এই চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে ঘাড় ওঠাবেন না। এ অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার শুরুর অবস্থায় ফিরে আসুন। একইভাবে ব্যায়ামটি করুন বাঁ দিকেও। পুরো ব্যায়ামটি ৮ থেকে ১০ বার পর্যন্ত করতে পারেন, রোজ এক বেলা বা দুই বেলা। ব্যায়ামটি আরও কার্যকর করে তুলতে যখন যে পাশে ঘাড় কাত করবেন, সেই পাশের হাতটি তুলে আনতে পারেন মাথার ওপরে। আঙুল দিয়ে হালকা চাপ দিন মাথায়।
৩ এই ব্যায়াম করতে পারেন বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায়। প্রথমে ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখুন। এবার ডান দিকে (নামাজে সালাম ফেরানোর মতো করে) ঘাড় ঘোরান, যতক্ষণ ঘাড়ের পেশিতে টান অনুভব করেন। এ অবস্থায় ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর শুরুর অবস্থায় ফিরে যান। একইভাবে ব্যায়ামটি করুন বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়েও। পুরো ব্যায়ামটি ৮ থেকে ১০ বার বার পর্যন্ত করতে পারেন, রোজ এক বা দুবার।
মো. সাইদুর রহমান চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ঢাকা