Samakal:
2025-11-03@10:46:35 GMT

দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান

Published: 1st, June 2025 GMT

দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান

দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। আড়ং, প্রাণ, মিল্ক ভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দুধের দাম বাড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে আড়ংয়ের এক লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ১০৫ টাকা, মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধের দাম ১০০ টাকা। দাম বাড়ায় অনেক ভোক্তা এরই মধ্যে তাদের দৈনিক দুধ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের দাম বাড়ায় এই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক পরিবার।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আজ রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

জানা গেছে, লোকসানের মুখে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই দাম বাড়ানোর পথে হেঁটেছে মিল্ক ভিটা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে দুধের ক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৪ শতাংশ ফ্যাটযুক্ত দুধের দাম ৫৮ টাকা প্রতি লিটার, পরিবহন খরচসহ ৬১ টাকার বেশি। প্রক্রিয়াজাতকরণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে আমাদের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮২ টাকার ওপরে। তবে পরিবেশকদের কাছে আমরা দুধ বিক্রি করছি ৭৮ টাকায়। ফলে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

দুধের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রাণের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খামারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে দুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। যেটা আমরা ভোক্তা পর্যায়ে বাড়িয়েছি। খামারিদের দাবি ছিল, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে জন্য তাদের লোকসান হচ্ছে। তারা বাড়তি দাম চাচ্ছিলেন, যে কারণে আমাদেরও বিক্রির দাম বাড়াতে হয়েছে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে দুগ্ধ খামারির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার টন। এর পরের তিন অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৭২ লাখ টনের বেশি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয় ৯২ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টন আর ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টন হয়েছে। বিপরীতে দেশে বছরে তরল দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টনের বেশি। বাকি চাহিদা মেটানো হয় গুঁড়া দুধ আমদানি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ লাখ টন দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুত করছে। বাকি দুধ খামারিরা মিষ্টি তৈরির দোকান এবং খোলাবাজারে বিক্রি করেন।

দাম নিয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আতিক ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আল মাহমুদ বলেন, আমরা মিল্ক ভিটাকে দুধ সরবরাহ করি। আমার খামারে দৈনিক ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ লিটার দুধ পাই। এগুলো ৫৮ থেকে ৬১ টাকার মধ্যেই সাধারণত বিক্রি করি। তবে বাজার কখনও কখনও নেমেও যায়।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের দাম বাড়ালেও খামারিদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। অনেক খামারি বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা গো-খাদ্যের খরচ মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।

শাহজাদপুরে দুগ্ধ খামারি আছেন প্রায় ৩০ হাজার। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ৫ লাখ লিটার। খামারির কাছ থেকে বড়-ছোট দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান দিনে সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, ইগলু ও আকিজের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র রয়েছে শাহজাদপুরে।

উল্লাপাড়ার পশ্চিমপাড়া গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুধের টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। খাবারের দামের চেয়ে দুধের দাম পেলে কিছুটা আয় হতো।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য তো বটেই, বড়দের খাদ্য তালিকায়ও দুধ থাকা উচিত। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে দুধ। এতে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে দুধের গ্রহণ কমে যাচ্ছে; যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা.

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুধ শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবার। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক খামারিদের জন্য দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা বাড়াতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পরিবহন সমস্যা সমাধান ও পণ্য বহুমুখীকরণে। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে পুষ্টি সংকট ও খামারিদের লোকসান আরও বাড়বে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, খামারিদের ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা গো-খাদ্যের খরচ কমাতে সহায়ক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ প রক র য় জ ত হ জ র টন ল খ টন

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার