তহবিল সংকটের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও পরিচালিত সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে (আরআরআরসি) লেখা এক চিঠিতে এই ঘোষণা দেয়। এতে ৪ হাজার বাঙালি শিক্ষক চাকরিচ্যুত হয়েছে। তার আগে জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে ‘লার্নিং স্কুল’ পরিচালনা করে আসছিল।

ক্যাম্পে এ শিক্ষা কার্যক্রমে সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিদ্যায়তনে ৮ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার বাঙালি ও ৪ হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষক। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার হঠাৎ ১ হাজার ২০০ বাঙালি শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। বিনা নোটিশে চাকরি হারানোর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালেও উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। এর মধ্য ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার ইউনিসেফ কক্সবাজার ফিল্ড অফিসের প্রধান এনজেলা কার্নে ও সেভ দ্য চিলড্রেনের মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, উখিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা সেক্টরের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো। 

ইউনিসেফের বিবৃতি: এদিকে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তহবিলের সংকটের জন্য রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার কিছু অংশীদারিত্বের চুক্তি বাতিল করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউনিসেফ। 

বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের তহবিলের যে সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে ইউনিসেফ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে এই সময়ে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার জন্য কিন্ডারগার্টেন, গ্রেড ১ ও গ্রেড ২ এ নিয়োজিত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর (হোস্ট কমিউনিটি) ১ হাজার ১৭৯ জন ব্যক্তির সঙ্গে ইউনিসেফের অংশীদারদের থাকা চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। এই শিক্ষকদের মধ্যে ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও অংকনের (ড্রয়িং) শিক্ষকেরাও রয়েছেন। ঈদ ও এর পরবর্তী ছুটি (২৯ জুন পর্যন্ত) শেষে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বাকি কর্মীদের শিক্ষা কেন্দ্রে তাদের কার্যক্রমে ফিরে আসাটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে নতুন অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার ওপর।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৯৫২ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের সহায়তায় নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছে ইউনিসেফ। যে কোনও অবস্থায় যেন প্রতিটি শিশু মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা পায় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জরুরি প্রয়োজনগুলো সম্পর্কে ইউনিসেফ সম্পূর্ণ অবগত। এই শিশুদের অনেককে ইতিমধ্যে ব্যাপক মানসিক অভিঘাত সহ্য করতে হয়েছে এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সুরক্ষা ব্যাহত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই শিশুরা যেন প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং মৌলিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা যাতে করে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং যখন তাদের স্বভূমিতে ফেরত যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় আসবে তখন তারা নিজেদের কমিউনিটিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনিসেফের চলমান কর্মসূচিগুলোর মূল কাজগুলো চালিয়ে নেবার জন্য, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা শিশুদের জন্য জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য এবং এই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়ে শিশুদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার জন্য এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। ইউনিসেফ আশাবাদী যে, অতিদ্রুত বাড়তি তহবিল পেয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে ও আরও বড় পরিসরে চালিয়ে নিতে পারব, যেগুলোর ওপর অনেক শিশু নির্ভর করে আছে।

এর আগে ইউনিসেফ ২ জুন প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল, তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী শিশু শিক্ষা ঝুঁকিতে রয়েছে। পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে স্থানীয় শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবকদের ছাঁটাই করতে হচ্ছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন এই চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‌‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক হাজার ২০০ জন শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়। এসব শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকদের চাকরি পুনর্বহাল এবং পর্যাপ্ত তহবিল প্রদানের জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করে আসছিলাম। এর মধ্য সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আসে।’ 

চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়কে অবরোধ: শুরু এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তহবিলে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন। এর ফলে এই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। দুপুরের দিকে উপজেলা প্রশাসনের সমাধানের আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষকরা।

উনচিপ্রাংয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষক মোহাম্মদ করিম বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে ক্যাম্পে পরিচালিত স্কুল থেকে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের রেখে আমাদের স্থানীয় শিক্ষকদের  চাকরিচ্যুত করেছেন। আমরা এর আগেও চাকরি ফিরে পেতে আন্দোলন করেছি। এখনও আমাদের চাকরি ফিরিয়ে পাইনি, তাই আন্দোলন করছি।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের যৌথ বিবৃতিতে ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি জেনেছি। এর ফলে প্রায় চার হাজার বাঙালি শিক্ষকের চাকরিচ্যুত হয়েছে। এ নিয়ে অন্যদিনের মতো আজকে উখিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এতে প্রধান সড়কে রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরে আমরা বিষয় নিয়ে কাজ করলে। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন স ফ চ কর চ য ত শ ক ষকদ র ইউন স ফ র পর চ ল ত র জন য অবর ধ তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে শেষে ডিএসইতে এ দিন ৩০০টি বা ৭৫.৩৮ শতাংশের বেশি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরপতন হয়েছে।

এ দিন আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে লেনদেন কমলেও সিএসইতে কিছুটা বেড়েছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

আরো পড়ুন:

৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন

বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আইসিএসবির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। সোমবার সকাল থেকেই ডিএসইএক্স সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় লেনদেনের শুরু হয়। লেনদেনের শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৪.৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২১.৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির, কমেছে ৩০০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৩টির।

ডিএসইতে মোট ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৯.৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২২৫ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.১৬ পয়েন্ট কমে ৮৯৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৪.২৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫টির।

সিএসইতে ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ