Samakal:
2025-07-30@16:06:26 GMT

ওরে কে বলে আরবে নদী নাই

Published: 3rd, June 2025 GMT

ওরে কে বলে আরবে নদী নাই

মার্কিন ইতিহাসবিদ রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল ইটোন তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য রাইজ অব ইসলাম অ্যান্ড দ্য বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার, ১২০৪-১৭৬০’ গ্রন্থে (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৩) পূর্ববঙ্গে ইসলাম প্রসারের ‘নদীময়’ কারণ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, সেটা নদনদীর সাংস্কৃতিক তাৎপর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ভাষ্য ও চর্চায় এই অঞ্চলের নদীগুলোর ভূমিকা প্রবল, বলাই বাহুল্য। খ্রিষ্ট বিশ্বাসমতে, স্বর্গোদ্যান থেকে যে চারটি নদী পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়েছে, এর একটিকে কোনো কোনো ইতিহাসবিদ গঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও, হাদিস অনুসারে, চারটি নদী বেহেশত থেকে আসার কথা বলা হয়েছে।
ইসলামে বর্ণিত চার নদীর কোনোটির সঙ্গে বৃহৎ বঙ্গের যোগসূত্র রয়েছে কিনা জানা নেই। তবে সমুদ্রপথের যোগ রয়েছেই; কারণ আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর একই ভারত মহাসাগরের অংশ। যে কারণে অনেকে মনে করেন, আজকের বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় ইসলাম ধর্ম এসেছিল সমুদ্রপথে। কারণ আরবের সঙ্গে ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই সমুদ্র বাণিজ্য চালু ছিল। আরবের ভূগোলবিদ আল মাসুদী (৮৯৬-৯৫৬) দশম শতকেই সমতটে (বর্তমান দক্ষিণবঙ্গ) চন্দ্র বংশীয় শাসনামলে মুসলমানদের বসবাস করতে দেখেছেন।
রিচার্ড ইটোন দেখিয়েছেন, আরব বণিকরা বঙ্গে শুধু বাণিজ্যেই মনোযোগী ছিল, ধর্মপ্রচারে নয়। তিনি বলেছেন, সুন্নি মুসলমানদের চারটি মাযহাবের মধ্যে আরব বণিকরা ছিল মূলত শাফিঈ। যে কারণে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো প্রাচীন সমুদ্র বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলোতে শাফিঈ মাযহাব সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশে হানাফি মাযহাব সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে মধ্য এশিয়া, ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে স্থলপথে উত্তর ভারতে এবং সেখান থেকে নদীপথে বঙ্গে আসা আরব, তুর্কি ও পারসিকদের মাধ্যমেই গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ইসলামের প্রসার ঘটেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রসারের আর্থসামাজিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে চারটি তত্ত্ব প্রচলিত– অভিবাসী ও বণিকদের মাধ্যমে, যোদ্ধাদের মাধ্যমে, মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়, সামাজিক উদারতাবাদের মাধ্যমে। রিচার্ড ইটোন এর সঙ্গে যোগ করেছেন কৃষক শ্রেণির উত্থান। বৃহৎ বঙ্গে তারাই দলে দলে ধর্মান্তরিত হয়েছে। মূলত দ্বাদশ শতক পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান হারে মুসলিম বণিক ও যোদ্ধারা বঙ্গে আসতে থাকেন এবং বসতি বা রাজ্য স্থাপন করেন। কিন্তু তারা ছিলেন ‘আশরাফ’ মুসলিম; তখনও বঙ্গে ‘আতরাফ’ সমাজ গড়ে ওঠেনি। চতুর্দশ শতক থেকে সুফি-দরবেশরা বাংলায় আসতে থাকলে কৃষক সমাজের ধর্মান্তর শুরু হয়। সুফি-দরবেশদের মধ্যেও হজরত শাহজালালের (রহ.

) সিলেট বিজয় গুরুত্বপূর্ণ; ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি ছিলেন অতীতের হিন্দু অধ্যুষিত বঙ্গ এবং ভবিষ্যতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বঙ্গের ভেদরেখা।
পূববঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে চতুর্দশ শতকে আরও যেসব সুফি-দরবেশ ইসলাম প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন, তাদের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলে হজরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.), বগুড়া-রংপুর অঞ্চলে হজরত শাহ সুলতান বলখি (রহ.), পাবনা অঞ্চলে হজরত মখদুম শাহদৌলা (রহ.), সুন্দরবন অঞ্চলে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে হজরত বদর শাহ (রহ.) ও তাঁর সঙ্গী ১২ আউলিয়া উল্লেখযোগ্য।
লক্ষণীয়, বদর শাহ ছাড়া এই সুফি-দরবেশদের সবাই উত্তর ভারত থেকে পূর্ববঙ্গ ও আসামে এসেছেন নদীপথে। প্রায় সবাই প্রথম গঙ্গা বেয়ে উত্তরবঙ্গের গৌড়ে এসেছেন, তারপর মধ্যবঙ্গের সোনারগাঁওয়ে এসে ব্রহ্মপুত্র বা মেঘনা বেয়ে হয় উজানের দিকে, না-হয় ভাটিতে গেছেন। কেউ কেউ সমুদ্রপথে এসে মেঘনা বেয়ে উজানে এসেছেন। বলা বাহুল্য, বিষয়টি সহজ ছিল না। হিন্দু রাজা-জমিদারদের প্রতিরোধ তো ছিলই; প্রাকৃতিক প্রতিরোধও কম ছিল না। এসব নিয়ে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। যেমন– মখদুম শাহদৌলা নৌপথে এসে বর্তমান হুরাসাগর নদীতে পৌঁছান। হুরাসাগর তখন ছিল তিনটি নদীর মিলিত প্রবাহ: বড়াল, করতোয়া, আত্রাই। আত্রাই ও করতোয়া তখন তিস্তার ত্রিস্রোতের অংশ; বড়াল দিয়েও প্রবাহিত হতো বিশাল চলনবিলের পানি। পরবর্তী সময়ে, উনিশ শতকের গোড়ায় মহানদ ব্রহ্মপুত্র প্রবাহপথ পরিবর্তন করে এখানে এসে মেশে। ব্রহ্মপুত্র যেহেতু যমুনা বেয়ে ‘হুড়মুড়’ করে নেমে এসেছিল, তাই তিন নদীর সঙ্গে তার মিলনস্থলের নাম ‘হুরাসাগর’।
কথিত রয়েছে, মখদুম শাহ হুরাসাগর পৌঁছে চারদিকে পানি ছাড়া কিছু দেখতে পারছিলেন না। ডাঙার খোঁজে পায়রা ছেড়ে দিয়েছিলেন চারদিকে। একটি পায়রার পায়ে মাটি দেখে সেদিকেই যাত্রা করে চরাঞ্চলের দেখা পান। সেখানেই মসজিদ ও খানকাহ নির্মাণ করে আশপাশের এলাকায় ধর্মপ্রচার করতে থাকেন। একদিন তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্থানীয় রাজার অনুচর। হুরাসাগর নদীর তীরে এখনও রয়েছে তাঁর সমাধি ও মসজিদ।
সুফি-দরবেশদের সামাজিক উদারতাবাদের পাশাপাশি অলৌকিক কর্মকাণ্ডও কিংবদন্তি হয়ে আছে। যেমন শাহ সুলতান বলখি করতোয়া নদী বেয়ে বগুড়া অঞ্চলে এসেছিলেন বিরাট মাছের পিঠে সওয়ার হয়ে। যে কারণ তাঁর নামের সঙ্গে ‘মাহিসওয়ার’ উপাধি যুক্ত হয়। 
প্রায় নদীহীন অঞ্চল থেকে নদীমাতৃক বাংলায় আসা সুফি-দরবেশদের ‘নদীময় কিংবদন্তি’ স্থানীয়দের কতটা প্রভাবিত করেছিল, বোঝা যায় এখনও নদী বা সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার সময় মাঝির বদর শাহ বা গাজী শাহের নাম নেওয়া দেখে। এ নিয়ে লালন ফকিরের গান রয়েছে– ‘বেসরা নেয়ে যারা/ তুফানে যাবে মারা একই ধাক্কায়/ কী করবে তোর বদর গাজী, থাকবে কোথায়।’ 
ইসলাম ধর্ম ও আরব ভূখণ্ডের বিভিন্ন ভাষ্যও নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলার নদীময় জনপদে। যেমন হজরত মুসার (আ.) নবুওতকালে হজরত খিজির (আ.) নামে একজন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষের সঙ্গে তাঁর অনেক ঘটনার বিবরণ রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। ‘খিজির’ অর্থ সজল-সবুজ; তিনি সমুদ্রে থাকতেন এবং ডাঙায় চলার পথ সবুজ হয়ে যেত। পারসিকরা তাঁকে খোয়াজ খিজির বা খাজা খিজির বা ‘পানির কর্তা’ আখ্যা দেয়। অনেকে বিশ্বাস করেন, খোয়াজ খিজির এখনও বেঁচে আছেন; পানিতে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে থাকেন। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন– ঊর্ধ্বে জাগিয়া রহিলেন ‘ইশা’ অমর, মর্তে ‘খাজাখিজির’ (অনাগত, মরুভাস্কর)। প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈসা (আ.) কিয়ামতের আগে আবার পৃথিবীতে আসবেন।
বস্তুত, সুফি-দরবেশরা বঙ্গে ইসলাম প্রচারে বিধি-বিধান ও আচার-ব্যবহারের চেয়ে আধ্যাত্মিকতাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। লোকায়ত আচার ব্যবহারেও খাপ খাইয়ে নিতে কার্পণ্য করেননি। এই উদারতাবাদই সহজিয়া কৃষকসমাজকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। জেলে ও তাঁতিরা যদিও কৃষকের মাত্রায় ইসলাম গ্রহণ করেনি; বঙ্গে কৃষকই ছিল বিপুল বৃহত্তম সমাজ।
বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গে এত কৃষক কেন? পূর্ববঙ্গে কৃষক সমাজের ঘনত্ব, তাদের কাছে সুফি-দরবেশদের আগমন এবং ইসলামের প্রসার– তিনটির নেপথ্যেই রয়েছে নদীর অবদান। ঐতিহাসিক কাল থেকেই এ অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর ছিল পূর্ব-দক্ষিণমুখী ঝোঁক। বিশেষত গঙ্গা ক্রমেই দক্ষিণ-পূর্বমুখী নতুন নতুন শাখার জন্ম দিচ্ছিল এবং প্রতিবারই নতুন শাখাটি প্রধান হয়ে উঠছিল। যেমন গঙ্গার প্রথম প্রধান ধারা ছিল ভাগীরথী; তারপর ক্রমেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সরতে সরতে যথাক্রমে জলাঙ্গী, মাথাভাঙা, ভৈরব, গড়াই, চন্দনা, আড়িয়াল খাঁ, সর্বশেষ পদ্মা হয়ে উঠেছে প্রধান ধারা। ফারাক্কা ব্যারাজ না থাকলে ভাগীরথী হয়তো এতদিনে খালে পরিণত হতো। এভাবে গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্বে সরতে সরতে উপমহাদেশের অপর প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলনের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গে তৈরি হয়েছিল ধান চাষের আদর্শতম ভূমি। কেন গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সরছিল ও নতুন শাখার জন্ম দিচ্ছিল? ভূগোলবিদদের উদ্ধৃত করে রিচার্ড ইটোন বলছেন– প্রাগৈতিহাসিককালে বঙ্গোপসারের তটরেখা ছিল অনেক উত্তরে। গঙ্গার মোহনা ছিল মুর্শিদাবাদ জেলায়। আর ব্রহ্মপুত্রের মোহনা ছিল রংপুর জেলায়। বরাক নদও সাগরে পড়ত হাওরাঞ্চলে। তিন নদীর পললে বঙ্গীয় ব-দ্বীপ গঠন শুরু হয়; যা এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং বাংলাদেশের ভূমি ক্রমেই দক্ষিণে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সাগরে ক্রমেই ভূমি গঠন হচ্ছিল এবং নদী ওর মধ্য দিয়ে পথ করে এগোচ্ছিল। কিন্তু গঙ্গা পললের প্রাবল্যে বারবার সরু হয়ে আসছিল। ফলে বর্ষাকালের বিপুল প্রবাহের চাপে নদীটিকে দক্ষিণ-পূর্বদিকের ঢালে নতুন নতুন পথ খুঁজে নিতে হচ্ছিল। কৃষকরা যেমন নতুন পলল ভূমিতে গিয়ে সহজ ফসল ও বসতি বেছে নিচ্ছিল, তেমনি পূর্ববঙ্গের কৃষিজ সমৃদ্ধি ডেকে আনছিল অন্য পেশাজীবীদেরও। দশম শতক থেকে আসতে থাকে লুটেরা, যোদ্ধা ও শাসনক্ষমতা প্রত্যাশীরা। ধর্ম প্রচারে আসেন সুফি-দরবেশ। আরব থেকে উদ্ভূত ইসলাম তৌহিদের মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে অনেক অঞ্চলেই লোকায়ত আচার-আচরণকে আত্মস্থ করেছে। পারস্য এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অনেকে যথার্থই মনে করেন, বঙ্গেও একইভাবে ‘নদীময় ইসলাম’ হয়ে উঠেছিল। বঙ্গে সুফি-দরবেশ প্রচারিত ইসলাম উপমহাদেশীয় ধর্মগুলোর সঙ্গে সম্প্রীতিরও নানা সূত্র আবিষ্কার করেছে। সমাজে নদীভিত্তিক পৌরাণিক কাহিনির যেমন ইসলামীকরণ হয়েছে, তেমনি খোয়াজ খিজিরের উপমহাদেশীয় সংস্করণও পাওয়া যাবে।
বর্তমান সময়েও দেখেছি, নদীভাঙনের মতো দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই কিছু অভিন্ন আচার মানে। মাছ ধরার আগে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জেলেরা নদীতে ‘ভোগ’ দেয়। বড় কথা, নদীপথে বঙ্গে এসে ইসলাম প্রচারকারী সুফি-দরবেশদের দরগাগুলো এখনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
মদিনাসহ আরব উপদ্বীপে বাংলাদেশের মতো ‘নদী’ নেই। রয়েছে কিছু ‘ওয়াদি’ বা মৌসুমি নদী খাত। কখনও বৃষ্টি হলে সেখানে অগভীর স্রোত বহে। বাকি সময় শুকনো খটখটে। কাজী নজরুল ইসলাম যদিও ‘ওরে কে বলে আরবে নদী নাই’ বলে প্রশ্ন তুলেছেন; তিনি ‘রহমতের ঢল বহে অবিরল/ দেখি প্রেমে-দরিয়ার পানি/ যেদিকে চাই’ বলে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আরও গেয়েছেন, ‘যাঁর    ক্বাবা ঘরের পাশে আব-এ-জমজম/ যথা আল্লা-নামের বাদল ঝরে হরদম,/ যার জোয়ার এসে দুনিয়ার দেশে দেশে/ (ওরে) পুণ্যের গুলিস্তান রচিল দেখিতে পাই।’ বাস্তবেও আরবের সেই অদেখা আধ্যাত্মিক নদীর প্রভাব বঙ্গে এসে সত্যিকারের নদীপথে ছড়িয়ে পড়েছিল। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ববঙ গ উপমহ দ শ ম প রস র ইসল ম প য় ইসল ম প রব হ দরব শ শ শতক

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার রানওয়ে প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর জন্য কতটা নিরাপদ

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম আকাশপথ। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহী বিমান, কার্গো, ভিআইপি ও সামরিক-বেসামরিক বিমান, হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এই একমাত্র আন্তর্জাতিক হাব থেকে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সলো ফ্লাইট প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত বা নিরাপদ নয়, কারণ এখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিমানবন্দরটি একটি নিয়ন্ত্রিত ক্লাস সি–ডি এয়ারস্পেসের মধ্যে পড়ে, যেখানে প্রতিটি ফ্লাইটকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে প্রতি পদক্ষেপে যোগাযোগ রাখতে হয়।

একজন নতুন প্রশিক্ষণার্থী পাইলট, বিশেষ করে একা থাকার সময়, এ ধরনের জটিল রেডিও যোগাযোগ ও সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মানসিকভাবে চাপে পড়ে, ককপিট ওয়ার্কলোড বা ককপিটে কাজের চাপ বেড়ে যায়, যা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে। 

এ ছাড়া এই বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ বা এয়ারবাস এ-৩৩০-এর মতো বড় বিমানগুলো ওঠানামা করে, যেগুলোর পেছনে তৈরি হওয়া ওয়েক টারবুলেন্স বা আকাশ ঝাঁকুনি ছোট প্রশিক্ষণ বিমানের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।

আবার কোনো কারণে এই যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হলে মাঝ আকাশে সংঘর্ষও হতে পারে। এর ওপর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, ফলে কোনো ইমার্জেন্সি বা বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি অবতরণের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

সবশেষে এই বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত কোনো আলাদা সময়সূচি বা নির্দিষ্ট ট্রেনিং এলাকা নেই, যা অনেক দেশের প্রশিক্ষণবান্ধব বিমানবন্দরগুলোতে থাকে। এসব কারণেই এই বিমানবন্দর ছাত্র পাইলটদের একক ফ্লাইট অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত নয়। বিকল্প হিসেবে লালমনিরহাট, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোরের মতো তুলনামূলকভাবে কম ব্যস্ত ও নিরাপদ বিমানবন্দরগুলো প্রশিক্ষণের জন্য বেশি কার্যকর ও নিরাপদ বলে বিবেচিত।

যেদিন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে সলো ফ্লাইটে (একা বিমান নিয়ে)  উড়েছিলেন, সেদিনের আবহাওয়া ছিল একেবারে অনুকূলে—উড়ানের জন্য যথাযথ। তৌকির নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী, দক্ষ ও চৌকস বৈমানিক।

আশির দশকে যখন ঢাকা রানওয়ে তৈরি হয়, তা শহর থেকে দূরে নিয়ম মেনেই তৈরি হয়েছিল। রানওয়ে শহরে ঢোকেনি। আমরা আমাদের শহর বানিয়ে রানওয়ে গিলে খেয়েছি। এখন যদি আরও নতুন রানওয়ে বানাই, লাভ হবে কী?

তাঁকে সলো ফ্লাইটের অনুমতি প্রদানকারী প্রশিক্ষকও নিঃসন্দেহে একজন অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ পাইলট। একজন শিক্ষার্থী পাইলটকে ১০০-তে ১০০ বিবেচনা করেই প্রশিক্ষক তাঁর ছাত্র পাইলটকে একা বিমান চালাতে পাঠান। প্রতিটা পদক্ষেপে কোথায় কেমন জরুরি পরিস্থিতি হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সেই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়গুলো বাস্তবিকভাবেই হাতে–কলমে আকাশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব শেষ হওয়ার পরই একজন প্রশিক্ষণার্থী পাইলটকে একক ফ্লাইট বা একা বিমান উড়াতে দেওয়া হয়।

একজন বিমানচালক হিসেবে আমার প্রথম প্রশ্ন, ঢাকা রানওয়ের আশপাশে কোথাও কি এই অনুশীলনগুলো করা হয়েছে? ফাঁকা জায়গাটা কোথায়?

ঢাকা টাওয়ার যখন প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের একক ফ্লাইটের অনুমতি দিল, তখন কি টাওয়ার জানত না, সেই সময় রেগুলার শিডিউল ফ্লাইটের অবতরণ আছে এবং নিয়মিত ট্রাফিক চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে এ ধরনের ফ্লাইটের অনুমতি দিলে?

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডি। অন্যদিকে বিধস্ত বিমানের বিভন্ন অংশ সংগ্রহ করেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ২২ জুলাই

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
  • কুয়েটে অচলাবস্থার ১৬০ দিন, ক্লাস শুরু মঙ্গলবার
  • রংপুরে হামলার শিকার পরিবারগুলো আতঙ্কে, বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে
  • ঢাকার রানওয়ে প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর জন্য কতটা নিরাপদ