মন্দিরা চক্রবর্তী। চিত্রনায়িকা। মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও খুব অল্প সময়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বড় পর্দায়। সর্বশেষ তাঁর অভিনীত ছবি ‘কাজলরেখা’ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার আসন্ন ঈদুল আজহায় মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি ‘নীলচক্র’, পরিচালনায় আছেন মিঠু খান। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। নতুন সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

‘নীলচক্র’ সিনেমাটি ঈদে মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমা মুক্তির আগের ঠিক এই সময়টাতে কেমন অনুভূতি হয়?

অনুভূতিটা অন্যরকম। এটা বলে বুঝানোর মতো না। তবে কিছুটা না নার্ভাস লাগে। দর্শকদের কেমন লাগবে, তারা আমার চরিত্রটি বা  সিনেমাটি কীভাবে নেবে এসব চিন্তা ভর করে। এ ছাড়াও এ সময়টা সিনেমার প্রচারণা নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়। সেটা আমার প্রথম সিনেমা কাজলরেখার সময়ও ছিল। নীলচক্রের সময়ও ফেস করছি। এ ব্যস্ততার কারণে চিন্তাগুলো খুব বেশি ক্ষণস্থায়ী হতে পারে না। 

‘নীলচক্র’ আপনার দ্বিতীয় সিনেমা। এ সিনেমায় আপনাকে কেমন চরিত্রে পাওয়া যাবে?

‘নীলচক্র’ আমার জন্য অনেক স্পেশাল। শুধু সিনেমার চরিত্রের জন্য না; বরং এ ছবিটা এক ধরনের ইমোশনাল জার্নি ছিল আমার জন্য। ছবিটিতে আমার চরিত্রের নাম রাইমা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। একজন নাচের শিক্ষক। বাস্তবেও নাচের মেয়ে আমি। তাই চরিত্রটি নিয়ে দারুণ ভালোলাগা ও মুগ্ধতা জড়িয়ে আছে। পরিচালক মিঠু খান দারুণভাবে সিনেমার গল্পটা উপস্থাপন করেছেন।

শুরুতেই বলেছিলেন আরিফিন শুভ আপনার ছোটবেলার ক্রাশ। তো সিনেমায় ক্রাশের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

একদম সত্যি, আরিফিন শুভ ভাই ছিলেন আমার টিনএজ ক্রাশ। সে সময় সিনেমায় তাঁকে দেখে মুগ্ধ হতাম। কখনও ভাবিনি, একদিন তাঁর বিপরীতে কাজ করার সুযোগ পাব। প্রথমে একটু নার্ভাস লাগছিল, কিন্তু শুভ এতটাই কো-অপারেটিভ আর গ্রাউন্ডেড যে, খুব দ্রুতই আমি কমফোর্ট ফিল করেছি। তিনি শুধু ভালো অভিনেতা নন, একজন দারুণ মানুষও।

‘নীলচক্র’-এর কোন দৃশ্যটি করতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল?

 একটা ক্লাইম্যাক্স সিন ছিল, যেখানে আমার চরিত্রটা ভীষণ ইমোশনাল অবস্থায় পড়ে। পুরো সিনটা টানা ওয়ানে শুট করা হয়, কোনো কাট ছাড়াই। আমাকে কান্না, রাগ, হতাশা সব একসঙ্গে প্রকাশ করতে হয়েছিল। ওই সিনটা করতে গিয়ে আমি সত্যিই কেঁদে ফেলেছিলাম, কারণ চরিত্রটা আমাকে এতটাই ছুঁয়ে গিয়েছিল।

ছবিটি নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বার্তা থাকবে?

‘নীলচক্র’ শুধু একটি থ্রিলার না, এটি সাম্প্রতিক সময়ের সমাজের চিত্রও। এখানে নারীর সংগ্রাম, নৈতিকতা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসঘাতকতার চমৎকার মিশেল রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সিনেমা দর্শকদের ভাবাবে, প্রশ্ন করবে এবং বিনোদনও দেবে।

আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী?
আমি একটু বেছে বেছে কাজ করতে চাই। গল্প আর চরিত্র দুটোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি চ্যালেঞ্জিং রোল করতে চাই, যেগুলো দর্শকদের মনে থাকবে। 

ব্যক্তিজীবনে অভিনয়ের বাইরে কী করতে ভালো লাগে?

আমি বই পড়তে ভালোবাসি, বিশেষ করে আত্মজীবনী। সময় পেলে রান্না করি, আর আমার বিড়ালটা নিয়ে অনেকটা সময় কেটে যায় (হাসি)। ভ্রমণ করতে খুব ভালো লাগে, পাহাড় আমার সবচেয়ে প্রিয়।

শেষ প্রশ্ন, ঈদের পরিকল্পনা?

নীলচক্রের জন্য এই ঈদটা আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। পরিবার আর কাছের বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখার প্ল্যান আছে। আশা করি দর্শকও হলে গিয়ে ছবিটা দেখবে এবং আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম আর ফ ন শ ভ ম র চর ত র ন লচক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতে গতি আসবে না

শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ইস্যুর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি আগামী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশেরও উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। আর জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দিতে জাতিসংঘে আবেদনের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন ব্যবসায়ীরা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। সেমিনারে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কেন? তিন মাস পরই নির্বাচিত সরকার আসবে, এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেন। এখন আমরা অর্থনৈতিক অনেক সংস্কারের কথা বলছি। কিন্তু কিচ্ছু হচ্ছে না। কোনো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) হচ্ছে না।’

নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এখনই এলডিসি উত্তরণের পরিস্থিতি নেই। এরই মধ্যে আমরা ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, প্রয়োজনে জাতিসংঘ এসে আমাদের পরিস্থিতি তদন্ত করে দেখুক। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হোক।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের নির্বাচিত সরকার দরকার। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে না।’

সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের ও ব্যবসা–বাণিজ্য পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। ক্রেতারা এখন আতঙ্কিত, তারা পণ্য কিনতে চায় না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান নির্বাচন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল। এখন সেটা হয়তো ৯৫ শতাংশে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা ৯০ শতাংশ হবে এবং আরও উন্নতি হবে। কেন এটা হয় না, সেটা নিয়ে আলোচনা দরকার। বর্তমান সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করেছে। এতে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে। অর্থাৎ ১২ লাখ বার এনবিআর এ কাগজ নিয়ে আসতে হয়নি।’ বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আপনারা বেপরোয়া (ডেসপারেট) হচ্ছেন। কিন্তু যে দেশের বিমানবন্দর আগুনে পোড়ে, সেখানে কে বিনিয়োগ করবে? দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।’

ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, ব্যাংক খাতে বিগত সরকারের সময়ের মতো অবস্থা চলতে থাকলে খাতটিকে দুই বছরের বেশি টিকে থাকতে পারত না। বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ