পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যোগ্য উপাচার্যদের খুঁজে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।

আজ বুধবার সচিবালয়ে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এবং মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগে নানা অসঙ্গতির কারণে আমরা ক্ষেত্রে একটি বোর্ড তৈরি করেছি। আমরা উপাচার্য নির্বাচনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব। এতে আগ্রহীরা আবেদন করবেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যোগ্যদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা চাই, প্রযুক্তি এমনভাবে ব্যবহার হোক যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও সুবিধাভোগী হয়। আমরা চাই, এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যেখানে শিক্ষকরা পেশাগত মর্যাদা পান।’

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার আরও বলেন, ‘এমন এক বেতন ব্যবস্থা সৃষ্টি করা যেন শিক্ষকরা সম্মানজনক বেতন পান। আগামী জুলাই থেকে কলেজ পর্যায়ে অনলাইনে শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। আমরা চাই, একটা স্বচ্ছ বদলি প্রক্রিয়া। এসব কাজ সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষ উপদ ষ ট উপ চ র য উপ চ র য ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্য 

১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—এই তিন ঐতিহাসিক ঘটনার সমন্বয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠন করতে চায় এনসিপি। তাদের লক্ষ্য দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি তারুণ্যনির্ভর বিকেন্দ্রীভূত গভর্ন্যান্সের (শাসন) মাধ্যমে তারা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চায়।

এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে দলের প্রস্তাবনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে এ কথা বলা হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে খসড়া গঠনতন্ত্রের বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেছে। গঠনতন্ত্রের এই খসড়া নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ দেশের ইতিহাসের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘১৯৪৭ ছিল আমাদের রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার সূচনা, ১৯৭১ ছিল আমাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপ আর ২০২৪ আমাদের সামনে একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার সুযোগ। এই তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে একত্র করে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।’

খসড়ায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণ বারবার রক্ত দিয়েছে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এখনো পূর্ণতা পায়নি। ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ শুধু একটি সরকারের পতনের জন্য জীবন দেননি; বরং দুর্নীতি, গুম ও মতপ্রকাশ দমনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য তাঁরা জীবন দিয়েছেন।

খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। ২২ জুন নির্বাচন মিশনে নিবন্ধনের আবেদনের শেষ দিন। এর আগেই আলোচনা করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হবে । নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, এনসিপি

দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিচ্ছে এনসিপি। খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে কেউ তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। দলীয় প্রধানকে তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে।

‘নতুন বাংলাদেশ’

খসড়া গঠনতন্ত্রে যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের কথা বলেছে, এর মূলে রয়েছে একটি শক্তিশালী, অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র; যেখানে সবার বাক্‌স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সংগঠনের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। সব ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে তারা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।

এনসিপি একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ নাগরিকভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, যেটি হবে দুর্নীতি ও অপব্যয়মুক্ত। খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সব ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে খসড়া গঠনতন্ত্রে। এ ছাড়া এনসিপি সব সময় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব-সম্পর্কিত বিষয়ে সোচ্চার থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চায় এনসিপি। নারী, শিশু, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেবে বলেও খসড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের অধিকারের সুরক্ষা ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দলটি পদক্ষেপ নেবে।

উদ্ভাবনকেন্দ্রিক ও কর্মসংস্থানমুখী করতে শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করার চেষ্টা করবে এনসিপি। কৃষি ও প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই ও রপ্তানিমুখী ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এনসিপির লক্ষ্য।

থাকবে ছায়া মন্ত্রিসভা

খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যদি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এনসিপি সরকার গঠন করে, তাহলে দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রাখা হবে। সরকারের দায়িত্বে গেলে দলীয় প্রধানকে পদ ছাড়তে হবে।

দলের জাতীয় পরিষদের ১০ শতাংশ সদস্য যদি দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্তের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেন, তাহলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রাজনৈতিক পরিষদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। রাজনৈতিক পরিষদকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারাও একইভাবে জবাবদিহির আওতায় থাকবেন।

দলের রাজনৈতিক পরিষদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই পরিষদ হবে নির্বাচিত। এনসিপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী দলের রাজনৈতিক পরিষদের অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন।

দলটির কাঠামো হবে বহুস্তরবিশিষ্ট। জাতীয় পরিষদ বা সাধারণ পরিষদে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব স্তরের সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া দলের তিনস্তরবিশিষ্ট আঞ্চলিক কাঠামো থাকবে।

ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের মতো করে এনসিপি একটি দলীয় পরামর্শক প্যানেল ও শ্যাডো ক্যাবিনেট (ছায়া মন্ত্রিসভা) গঠন করবে। ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রণালয়গুলোর মতোই দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা নীতি বিশ্লেষণ করবেন এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে শাসনব্যবস্থার জন্য বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।

জানতে চাইলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দলের এই খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনের শেষ দিন। তার আগেই দলের সাধারণ সভায় আলোচনা করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ