কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি কামারুলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Published: 4th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের ছয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ১ কোটি ৯৫ লাখ ১৬ হাজার ৬১৪ টাকা রয়েছে। একইসঙ্গে তাকে দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৪ জুন) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ছুমিয়া খানম দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল।
আদালত ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের ব্যাংকে বিপুল অর্থ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। তার ব্যাংকের টাকা হস্তান্তর বা হাতবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার নামের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করে দুদক।
আদালত শুনানি শেষে এই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দেন। আরও জানা গেছে, কামারুল আরেফিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। কামারুল আরেফিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। তিনি পলাতক রয়েছেন।
কুষ্টিয়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের ছয়টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে কামারুলের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কামারুল আরেফিন ভারতে পালিয়ে যান।
ঢাকা/কাঞ্চন/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম র ল আর ফ ন র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)