ইলন মাস্কের গাড়ি নির্মাণের প্রতিষ্ঠান টেসলা এই মাসে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। টেক্সাসের অস্টিনে নিজস্ব সদর দপ্তরে স্বচালিত রোবোট্যাক্সি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে টেসলা। স্বায়ত্তশাসিত যানবাহনের প্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বিরোধী অবস্থান থাকার পরেও রাস্তায় নামার জন্য তৈরি টেসলা।

টেসলা ১০ থেকে ২০ মডেল ওয়াই গাড়ির রাস্তায় চলছে অনেক বছর ধরে। অনেক আগে থেকেই টেসলা স্বচালিত যানবাহনের ঘোষণা দিয়ে আসছে। অস্টিনের রোবোট্যাক্সি উদ্বোধনের সময় মাস্ক জানান, ২২ জুন আপাতত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সারা বিশ্বেই টেসলাসহ বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রির পরিমাণ কমছে। অন্যদিকে ইলন মাস্কের ডানপন্থী রাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে টেসলা বেশ চাপের মধ্যেই আছে। বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা টেসলার স্টক মার্কেটে ভালো অবস্থানে নেওয়ার জন্য রোবোট্যাক্সি ও হিউম্যানয়েড রোবটের চমক প্রত্যাশা করছেন। ২০২৪ সালে ইলন মাস্ক বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন, বিনিয়োগকারীরা যদি মনে করেন কোম্পানি চালকবিহীন যানবাহনের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে পারবে না, তাহলে টেসলার শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া উচিত।

অস্টিন শহরের জন্য টেসলার রোবোট্যাক্সি উদ্বোধন স্বায়ত্তশাসিত যানবাহনের জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। ২০১৭ সালে টেক্সাস আইনসভা অটোশিল্পের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে নিষেধ করে। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা আরও কঠিন নিয়মের জন্য চাপ দিচ্ছেন।

অস্টিনে পুলিশ অফিসাররা ক্রমাগত গুগলের মালিকানাধীন অ্যালফাবেটের ওয়েমো ও জেনারেল মোটরসের অধুনালুপ্ত ক্রুজের স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব স্বচালিত গাড়ির কারণে জটিল ট্র্যাফিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। অস্টিন পুলিশের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম হোয়াইট বলেন, এসব যানবাহন ট্র্যাফিক বাধা উপেক্ষা করে নিষিদ্ধ এলাকায় চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জন্য বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। যদিও এই মেশিন শিখছে, তবে তারা নিশ্চিতভাবে যথেষ্ট দ্রুতগতিতে শিখছে না। ওয়েমো জানিয়েছে, তারা অস্টিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে প্রযুক্তি উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

টেক্সাস আইনসভায় গত মাসে একটি বিল পাস করা হয়েছে। বিল অনুসারে প্রথমবারের মতো স্বায়ত্তশাসিত যানবাহনের বিভিন্ন কোম্পানিকে অঙ্গরাজ্যে পরিচালনার জন্য অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে যদি চালকবিহীন যানবাহন জনসাধারণের জন্য বিপদ ডেকে আনার আশঙ্কা দেখে, তবে অনুমতি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে। জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশ কীভাবে যানবাহন ব্যবস্থাপনা করবে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

ইলন মাস্ক ও টেসলা অস্টিনে রোবোট্যাক্সি চালু করার জন্য তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তেমন তথ্য জানায়নি। টেসলার গাড়িতে নতুন সেন্সর বা অন্যান্য প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি না, যা বর্তমানের পূর্ণ স্ব-ড্রাইভিং বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা কি না, তা জানা যায়নি। মঙ্গলবার ইলন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে একটি পোস্টে জানান, নতুন সংস্করণের সফটওয়্যার ব্যবহার করে টেসলা গাড়ি রাস্তায় নামবে। এ বছরের জানুয়ারিতে মাস্ক বলেছিলেন, টেসলা জুন মাসে অস্টিনে অর্থের বিনিময়ে স্বায়ত্তশাসিত রাইড-হেলিং অফার করবে। এরপর অন্যান্য আমেরিকান শহরে তা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে বলে জানান। টেসলা যেকোনো জায়গায় কাজ করে বলে জানান ইলন। এ বছরের এপ্রিলে ইলন আরও জানান, অস্টিনে টেসলা টেন বা টোয়েন্টি মডেলের ওয়াই গাড়ি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অনেক শহরে এই গাড়ি দেখা যাবে। আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে লাখ লাখ টেসলা সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিতভাবে রাস্তায় থাকবে বলে জানান ইলন মাস্ক। গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে ইলন বলেন, যখন টেসলা অস্টিনে রোবোট্যাক্সি স্থাপন করবে, তখন কোম্পানি বিভিন্ন যানবাহনকে জিওফেন্স করবে। কেবলমাত্র অস্টিনের সেই অংশে এসব গাড়ি পরিচালনা করবে যে এলাকা সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হয়। কোম্পানির কর্মীরা দূর থেকে এসব যানবাহন পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানান ইলন। টেসলা এখনো যাত্রীদের তথ্য ও টেসলা কীভাবে যাত্রার জন্য ভাড়া নেবে তার তথ্য প্রকাশ করেনি।

সূত্র: রয়টার্স

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র জন য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকামুখী যাত্রায় যমুনা সেতুর পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার যানজট

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে আবারও ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এ কারণে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

যমুনা সেতু সাইট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে চলেছে ৩০ হাজার ৮১৭টি এবং ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন যমুনা সেতুর পশ্চিমের কড্ডার মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজট চলছে। নলকা সেতু থেকে ঝাঐল উড়ালসড়ক হয়ে যমুনা সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে এই যানজট দেখা গেছে। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে থেমে থেমে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।

রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সেতু পরিবহনের সুপারভাইজার আবদুল আল মামুন বলেন, ‘দিবাগত রাত ১টার দিকে পীরগাছা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। এখন সকাল সাড়ে ১০টায় সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে উড়ালসড়কে যানজটে আটকে আছি। কখন ঢাকায় পৌঁছাব, তা বলা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বগুড়া থেকেই গাড়ি ধীরগতিতে চলছে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে যানজটের তীব্রতা বেড়ে নলকা সেতু পার হওয়ার পর তা প্রকট আকার ধারণ করে।

ঢাকার উদ্দেশে কড্ডার মোড় থেকে রওনা হওয়া পোশাকশ্রমিক আলী হাসান বলেন, ‘আজই ছুটির শেষ দিন। তাই পরিবার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কিন্তু যানজটে সেতু পার হতে পারছি না। তার ওপর গরমে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।’

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ছুটির শেষ দিনে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় মহাসড়কে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ বলেন, সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও কোথাও কোথাও সাময়িক যানজট তৈরি হচ্ছে, যা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ