ভেঙে ফেলা হচ্ছে মুনমুনের হাতের মুদ্রা অবয়বে নির্মিত ভাস্কর্য
Published: 18th, June 2025 GMT
ভেঙে ফেলা হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ম্যুরাল। ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিলো বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ভবন এবং পুরাতন কলা অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি পুকুরের অংশে। সামাজিক মাধ্যমে মুনমুন আহমেদ নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন।
একজন নারী দুহাত সংযুক্ত করে অঞ্জলি দিচ্ছে, ম্যুরালটি সেই ভাবনা বহন করতো। যেটি দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক, নৃত্য প্রশিক্ষক ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদের হাতের ছবি থেকে করেছিলেন ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল।
ম্যুরাল ভাঙার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে মুনমুন আহমেদ নিজেই লিখেছেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক, এই মুহূর্তে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যুরাল ‘অঞ্জলি লহ মোর’! যেটি আমার হাতের ছবি থেকে করা হয়েছিল। এটি ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল করেছিলেন।’’
সেই পোস্টের কমেন্ট ঘরে সংগীতশিল্পী-অভিনেতা পান্থ কানাই লিখেছেন, ‘থামাবে তো পরের কথা, কেও প্রতিবাদও করবে না। দেখেন সব সেলিব্রিটি চিল্পিরা চুপ মাইরা গেছে। দেখেন দেখেন।’
একজন জানতে চেয়েছেন, ‘কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে?’ সেই প্রশ্নের জবাবে মুনমুন লিখেছেন, ‘দেশে কোন ভাস্কর্য থাকতে দেয়া হবে না!’ একজন লিখেছেন, ‘কি যে শুরু করেছে! এদেশের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে ফেলছে একদল মানুষরূপী দানব। ঘৃণা জানানোর কোন ভাষা নেই।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘খুবই দুঃখজনক এবং ক্ষুব্ধ’।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়। অনুষদ ভবনের সামনের পুকুরটির সৌন্দর্যব বৃদ্ধির জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল ভাস্কর্যটি। তবে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন মহল ও নতুন প্রশাসনের বিভিন্ন জনের আপত্তির কারণেই ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছিলেন দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের দায়ে অভিযুক্ত তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড.
এ বিষয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে অনেক আগেই ডিনবৃন্দ ও সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। এটা সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তের কারণেই হচ্ছে। তখন তো অনেকগুলো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হয়েছিলো, কেউ কেউ ভাস্কর্যটি নিয়ে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিলো। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
দেশের প্রতি চারজনের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন। আলোচক ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিবিএসের ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য ব্যবহার করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) নিরূপণ করা হয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হলো দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি, যা শুধু আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দারিদ্র্যকে তার বিভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের এ সূচকে তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মাত্রাগুলোকে ১১টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়েছে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি, বাসস্থান, রান্নার জ্বালানি, সম্পদ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর শহরে ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রধান অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এমপিআই-কে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি নতুন ও উদ্ভাবনী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। তিনি এ সূচককে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ ছাড়া কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমপিআই ব্যবস্থাটি আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। সভাপতির বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান, জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করবে এবং নীতিনির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।