তলিয়েছে বীজতলা, আমন চাষ কীভাবে করবেন চাষি
Published: 19th, June 2025 GMT
যে জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করেন, সেই জমি তলিয়ে আছে সপ্তাহ দুয়েক ধরে। এরই মধ্যে আমন চাষের মৌসুম চলে এসেছে। কিন্তু বীজতলায় চারা তৈরি নিয়ে কোনো আশা দেখছেন না শতাধিক চাষি। আসন্ন আমন মৌসুমে কী করবেন– এ নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা তারা।
এই চিত্র পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া গ্রামে। গ্রামটি পড়েছে উপজেলার ১ নম্বর পাড়েরহাট ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানায়, টগড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কচা নদী। সাম্প্রতিক নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি ভারী বর্ষণে কচা ও বলেশ্বর নদের পানি বৃদ্ধি পায়। এতে আশপাশের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এসব গ্রামের পানি সরে গেলেও টগড়া গ্রামের পাশে বেড়িবাঁধ থাকায় পানি নামতে পারেনি।
টগড়া গ্রামের কৃষক মোকাম্মেল হোসেন, আব্দুর হাওলাদার, নেসার হোসেনসহ কয়েকজন বুধবার জানান, তাদের জমি অন্তত তিন ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। যে কারণে আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। চারা তৈরি করতে না পারলে এবার আমনের চাষ করা যাবে না। এতে অন্তত শতাধিক কৃষকের ক্ষতি হবে।
পাড়েরহাট ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ভাষ্য, কচা নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় টগড়া প্রান্তে পানি নামার দুটি পয়েন্টও বেঁধে ফেলা হয়। এ কারণেই এই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় এলাকাবাসী বিষয়টি জানায়নি। তারা সহায়তা করলে পানি নিষ্কাশনের জন্য এ পয়েন্টগুলো রাখা যেত। এ বিষয়ে আলোচনা করে পানি নিষ্কাশনের পথ করতে হবে।
হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে বাড়িঘর
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মানববন্ধনে এমন দাবি তোলেন তারা। বৃষ্টিতে ভিজেই এই কর্মসূচিতে অংশ নেন কয়েকশ মানুষ।
সেখানে বক্তারা অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে একটি শিল্প গ্রুপ ফুলতলা গ্রামে গুদাম তৈরি করে। এ জন্য গ্রামের পানি নামার পথ তারা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো গ্রামে পানি জমে যায়। এক দিন বৃষ্টি হলে ১৫-২০ দিন তাদের পানিবন্দি থাকতে হয়।
তারা বলেন, পানি চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ার পর থেকে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে হাঁটুসমান পানি জমে আছে। গ্রামের সড়কগুলোও ডুবে আছে। ঘরে ঘরে পানি ঢুকে আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে রান্নাবান্না পর্যন্ত করতে পারছেন না। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দুর্ভোগ নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা রবিউল হক, কামাল উদ্দিন, বায়তুল আমান জামে মসজিদের খতিব আবদুল হালিম হেলালি, সাবেক ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম, বাবুল চৌধুরী প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গুর অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বর্ষা মৌসুমে পুরো দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। চলতি বছরে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকা এবং বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ হলেও এর অ্যান্টিভাইরাল কোনো চিকিৎসা নেই। এই রোগ যেহেতু মশার কামড়ে হয়- তাই এই রোগ থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হলো মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়, আর এই মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। কেউ যদি দিনে ঘুমায় তাহলে অবশ্যই মশারি দিয়ে ঘুমাতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের খালি গায়ে রাখা যাবে না। বাথরুমে যেন পাঁচদিনের বেশি জমা পানি না থাকে। ’’
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর এ.বি. এম আবদুল্লাহ একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘ডেঙ্গুর স্পেসিফিক কোনো চিকিৎসা নেই। এই রোগ হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। শরীর বার বার স্পন্স করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শরবত, গ্লুকোজ, ডাবের পানি পান করতে হবে। যদি এসব খাবার খেতে না পারি তাহলে আমরা বিভিন্ন রকমের ইন্টারভেনাস ফুড ‘ইন্ট্রাভেনাস বা শিরা পথে সরাসরি পুষ্টি সরবরাহ করা’ দিয়ে থাকি এতেই অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
যে কারণে শরীরের ৫-৭ অঙ্গে একসঙ্গে ব্যথা হয়
দশ সেকেন্ডে একবার চোখের পলক ফেলা জরুরি কেন?
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘‘অনেকেই মনে করেন, ডেঙ্গু হলেই ব্লাড দিতে হবে। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। রক্ত অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো দরকারই নাই। যদি রক্তক্ষরণ বেশি হয় তাহলে রক্ত দেওয়া লাগতে পারে। প্লাটিলেট একটু কমলেই অনেকেই রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দেওয়ার দরকার পড়ে না। এটা পাঁচ-ছয় দিন পড়ে কমে যায় আবার সাত-আট দিন পরে এমনতেই বাড়ে। তবে রোগীর শরীর যদি বেশি খারাপ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে প্লাটিলেট দেওয়া যেতে পারে।’’
প্রোফেসর এ.বি. এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘অনেকেই মনে করে, ডেঙ্গু হলে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না, অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর ক্ষতি করবে। এখানে একটি ক্লিয়ার কথা-ডেঙ্গুতো ভাইরাস। এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো রোলই নাই। সেক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হলে যেমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হতে পারে, বয়ষ্কদের নিউমনিয়া হতে পারে। কারও টাইফয়েড দেখা দিতে পারে, ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে- সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।’’
ঢাকা/লিপি