শিক্ষা নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ আমলে নিন
Published: 20th, June 2025 GMT
গত ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় অতীতের রাজনৈতিক সরকারগুলোর অর্থমন্ত্রীর মতোই দক্ষ, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এ জন্য ইউনেস্কোর যে সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রয়োজন, তা তিনি মনে রাখেননি। ইউনেস্কোর সুপারিশ জাতীয় বাজেটে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ ধারাবাহিকভাবে খরচ হলে একটা দেশ কাঙ্ক্ষিত দক্ষ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ জনশক্তি পাবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষা কাঠামোর জন্য এ বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদমাধ্যমের খবর, ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের দুই দশমিক ০৮ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা হয়। পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি নামিয়ে আনা হয় ১ দশমিক ৮৩ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও হ্রাস করে জাতীয় আয়ের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ করা হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা হয়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের ব্যয় বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস করার প্রবণতাকেই সরকার ধরে রেখেছে।
এর মধ্যে আরও একটি দুঃসংবাদ জাতির জন্য অপেক্ষা করছে। এ বছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতের মতো খুবই অতি প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে। বিগত বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। বর্তমান বছরে তা হ্রাস করে নিয়ে আসা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকায়। অথচ গ্রাম ও শহরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়।
প্রায়ই একটি আক্ষেপ প্রাইমারি শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়– দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বড় অংশ তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করছে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষাক্রমের প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের মাদ্রাসায় দেওয়ার প্রতি আগ্রহী হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ– সেখানে শিক্ষার্থীদের দুই–আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে তিনবেলা খাবার, বইপত্র, খাতা-কলম দেওয়া হয়। ধর্মীয় শিক্ষা ইহকাল ও পরকালের নিশ্চয়তা দেয়– এমন জোরদার প্রচারণাও আছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা শত শত বছর ধরে এ ভূখণ্ডে আছে; ভবিষ্যতেও তা নিশ্চয় থাকবে। তবে একটি দেশের উন্নয়নে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় শিক্ষা মূল শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত না; তা যে ধর্মই হোক না কেন। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন এবং আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হলে সাধারণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। তাই সাধারণ শিক্ষায় সরকারি ব্যয় না বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার পূর্বসূরিদের মতো জাতিকে উল্টো দিকে চালিত করছে।
এমনিতেই উচ্চ-মধ্যবিত্ত থেকে ধনিক শ্রেণি তাদের সন্তানদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেছে নিচ্ছে। সেখানে শিক্ষা ব্যয় এতটাই বেশি, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এই জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করার কথা কল্পনাই করতে পারে না। উপরন্তু বিষয়বস্তুর দিক থেকে এই শিক্ষাও বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার দিকে ঠেলে দিলে তা হবে বাড়তি আশঙ্কার বিষয়। কারণ দুটো ধারার কোনোটিই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। বড় বিষয়, এই দুই ধরনের শিক্ষাতেই মাতৃভাষা বাংলা হয় উপেক্ষিত, নয় সংকুচিত।
শিক্ষা কমিশন গঠন না করার কারণে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
৫ আগস্টের পর দেশের স্কুল-কলেজে যেভাবে শিক্ষকদের হেনস্তা করা হয়েছে, তা একটি ক্ষত হয়ে থাকবে। অটো পাসের দাবি এবং পুরো সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলায় বহু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দেশ ছেড়েছেন। অনেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এই ক্ষত শুকিয়ে কবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা সবাই।
জাতীয় বাজেটেও এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যাতে মনে করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা খাতে বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা চাইব, সামনে যখন উপদেষ্টা পরিষদে নতুন বাজেটটি চূড়ান্ত করা হবে তখন এসব উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হবে।
রুস্তম আলী খোকন: সদস্য সচিব, জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় আয় র হ র স কর র জন য দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল