গত ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় অতীতের রাজনৈতিক  সরকারগুলোর অর্থমন্ত্রীর মতোই দক্ষ, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এ জন্য ইউনেস্কোর যে সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রয়োজন, তা তিনি মনে রাখেননি। ইউনেস্কোর সুপারিশ জাতীয় বাজেটে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ ধারাবাহিকভাবে খরচ হলে একটা দেশ কাঙ্ক্ষিত দক্ষ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ জনশক্তি পাবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী শিক্ষা কাঠামোর জন্য এ বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদমাধ্যমের খবর, ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের দুই দশমিক ০৮ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা হয়। পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি নামিয়ে আনা হয় ১ দশমিক ৮৩ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও হ্রাস করে জাতীয় আয়ের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ করা হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা হয়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের ব্যয় বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস করার প্রবণতাকেই সরকার ধরে রেখেছে। 

এর মধ্যে আরও একটি দুঃসংবাদ জাতির জন্য অপেক্ষা করছে। এ বছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতের মতো খুবই অতি প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে। বিগত বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। বর্তমান বছরে তা হ্রাস করে নিয়ে আসা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকায়। অথচ গ্রাম ও শহরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণের সন্তানরাই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়।
প্রায়ই একটি আক্ষেপ প্রাইমারি শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়– দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বড় অংশ তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করছে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষাক্রমের প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের মাদ্রাসায় দেওয়ার প্রতি আগ্রহী হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ– সেখানে শিক্ষার্থীদের দুই–আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে তিনবেলা খাবার, বইপত্র, খাতা-কলম দেওয়া হয়। ধর্মীয় শিক্ষা ইহকাল ও পরকালের নিশ্চয়তা দেয়– এমন জোরদার প্রচারণাও আছে। 

মাদ্রাসা শিক্ষা শত শত বছর ধরে এ ভূখণ্ডে আছে; ভবিষ্যতেও তা নিশ্চয় থাকবে। তবে একটি দেশের উন্নয়নে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় শিক্ষা মূল শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত না; তা যে ধর্মই হোক না কেন। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন এবং আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হলে সাধারণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। তাই সাধারণ শিক্ষায় সরকারি ব্যয় না বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার পূর্বসূরিদের মতো জাতিকে উল্টো দিকে চালিত করছে। 
এমনিতেই উচ্চ-মধ্যবিত্ত থেকে ধনিক শ্রেণি তাদের সন্তানদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেছে নিচ্ছে। সেখানে শিক্ষা ব্যয় এতটাই বেশি, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এই জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করার কথা কল্পনাই করতে পারে না। উপরন্তু বিষয়বস্তুর দিক থেকে এই শিক্ষাও বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার দিকে ঠেলে দিলে তা হবে বাড়তি আশঙ্কার বিষয়। কারণ দুটো ধারার কোনোটিই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। বড় বিষয়, এই দুই ধরনের শিক্ষাতেই মাতৃভাষা বাংলা হয় উপেক্ষিত, নয় সংকুচিত।
শিক্ষা কমিশন গঠন না করার কারণে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

৫ আগস্টের পর দেশের স্কুল-কলেজে যেভাবে শিক্ষকদের হেনস্তা করা হয়েছে, তা একটি ক্ষত হয়ে থাকবে। অটো পাসের দাবি এবং পুরো সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলায় বহু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দেশ ছেড়েছেন। অনেকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এই ক্ষত শুকিয়ে কবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা সবাই।
জাতীয় বাজেটেও এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যাতে মনে করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা খাতে বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা চাইব, সামনে যখন উপদেষ্টা পরিষদে নতুন বাজেটটি চূড়ান্ত করা হবে তখন এসব উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হবে।

রুস্তম আলী খোকন: সদস্য সচিব, জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় আয় র হ র স কর র জন য দশম ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ৯ মাসে লোকসান কমেছে ১৯.৭৯ শতাংশ

পুঁজিবাজারে সিরামিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫) ও নয় মাসে (জুলাই, ২০২৪ থেকে মার্চ, ২০২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির নয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) কমেছে ১৯.৭৯ শতাংশ।

বুধবার (১৮ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৭ জুন) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক ও আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।

তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (২.৩২) টাকা। আগের অর্থবছরের একই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (৩.২৬) টাকা। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান কমেছে (০.৯৪) টাকা বা ২৮.৮৩ শতাংশ।

এদিকে, তিন প্রান্তিক মিলে বা ৯ মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (১২.২৮) টাকা। আগের অর্থবছরের একই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (১৫.৩১) টাকা। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান কমেছে (৩.০৩) টাকা বা ১৯.৭৯ শতাংশ।

২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে (৫০.১২)।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক: উপদেষ্টা
  • জনস্বাস্থ্যবিরোধী বাজেট: সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করার দাবি
  • কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হতে পারে
  • কমলা-মাল্টা-লেবুতে সম্ভাবনার সুবাস
  • জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: ফ্ল্যাট পাবে শহীদদের পরিবার
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি বেলিয়ার
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি
  • ২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস,ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে
  • স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ৯ মাসে লোকসান কমেছে ১৯.৭৯ শতাংশ