সিটি ব্যাংক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে
Published: 29th, June 2025 GMT
সিটি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ। আজ রোববার ব্যাংকের ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এই লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। সিটি ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার। এতে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ; পরিচালক রুবেল আজিজ, হোসেন মেহমুদ, সৈয়দা শায়রীন আজিজ, সাভেরা এইচ মাহমুদ ও রেবেকা ব্রোসন্যান; স্বতন্ত্র পরিচালক মতিউল ইসলাম নওশাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন, কোম্পানি সচিব মো.
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এজিএমে শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশের পাশাপাশি ব্যাংকের ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করেন।
চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ২০২৪ সালে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ১৪ কোটি টাকার সমন্বিত কর-পরবর্তী মুনাফা অর্জন করেছে, যা এর আগের বছরের ৬৩৮ কোটি টাকার চেয়ে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশেও সিটি ব্যাংক দৃঢ়তা ও গতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।’
সভায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক চিত্র শেয়ারহোল্ডারদের সামনে তুলে ধরে তাঁদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছি। একাধিক ডিজিটাল ফার্স্ট উদ্যোগ চালু করেছি, রিটেইল ও এসএমই খাতে বৈচিত্র্য বাড়িয়েছি। সেই সঙ্গে সম্পদের গুণগত মান বজায় রেখেছি। চলতি ২০২৫ সালে আমরা সম্প্রসারণ, উদ্ভাবন ও গ্রাহক–সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’