দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভা। শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকেই দলে দলে কর্মী-সমর্থকরা ছুটে আসছেন রংপুর নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। 

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে সভায় আগত লোকজনের সুবিধা এবং যানযট নিরসনে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্বও যেন ছিল চোখে পড়ার মতো।

জনসভাকে ঘিরে চারদিকে ইসলামী স্লোগান, রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর রাজনৈতিক উজ্জীবনের ছাপ। জনসভাস্থলকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ যেন বিরাজ করছে।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বিপ্লব পরবর্তী এটি হবে উত্তরাঞ্চলের ইসলামী রাজনীতির এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মুহূর্ত।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার, তিস্তা মহা পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এই জনসভার মূল দাবি।

স্থানীয় দলীয় সূত্র জানায়, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেই জামায়াত আমির ডা.

শফিকুর রহমান শুরু করেন উত্তরাঞ্চল সফর। সেই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে তিনি সম্পন্ন করেছেন ১০টি সাংগঠনিক সফর। আজকের এই জনসভা তার একাদশ (১১তম) সফর বলেও জানান তিনি।

জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন কারাবন্দী থেকে সদ্য মুক্ত হওয়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রংপুরের কৃতি সন্তান এটিএম আজহারুল ইসলাম থাকছেন প্রধান বক্তা হিসেবে।

এছাড়াও রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলীয়ভাবে মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীরাও মঞ্চে থাকবেন বলে জানা গেছে। জনসভাকে ঘিরে গঠিত হয়েছে হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক সদস্য। যারা সভাস্থলসহ পুরো নগরীকে নিরাপত্তা, সুশৃঙ্খলতা ও ব্যবস্থাপনায় কাছ করছেন সকাল থেকেই।

জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান জানান, প্রস্তুতি সম্পন্ন। জনসভায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতির আশা করা হচ্ছে। রংপুরের মাটি থেকে যে আওয়াজ উঠেছে, তা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েবে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বলে দাবি তার।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এই জনসভা কেবল একটি সমাবেশ নয় বরং এটি হতে যাচ্ছে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ঘোষণা।

রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জামাতের বিভাগীয় জনসভা থেকে ঘিরে পুলিশের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেন এই জনসভায় ঘিরে কোন পক্ষ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকেও সজাগ রয়েছে মহানগর পুলিশ।

ঢাকা/আমিরুল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ই জনসভ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩