চট্টগ্রামে বৃষ্টি অব্যাহত, যাতায়াতে দুর্ভোগ
Published: 9th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার সব উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া বৃষ্টি বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। কখনো থেমে থেমে, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর।
বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দার হাট, মেহেদীবাগ, মুরাদপুর, চকবাজার, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে ঘর থেকে বের হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কর্মমুখী মানুষকে।
আরো পড়ুন:
সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, পানির নিচে ৩০ গ্রাম
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় গত রবিবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে আগামী ১২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। টানা বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যে বন্ধন জুলাইয়ের...
চিত্রগ্রাহক শহিদুল আলম ভাইয়ের সঙ্গে বছর সাতেক আগে আমার ছেলের একবার দেখা হয়েছিল। তিনি তখন তাঁর ফোল্ডিং সাইকেলটা চালিয়ে ধানমন্ডি দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার ছেলে তার নানির সঙ্গে রিকশায় বসে। হুডের ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অবাক হয়ে ও সাইকেলটা দেখছিল। শহিদুল ভাই ওকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘সাইকেল চালাতে পারো?’
চব্বিশের জুলাই অমন করে জীবনে না এলে, তাঁর সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কোনো সদস্যের এর চেয়ে বেশি আলাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু চব্বিশের অবিস্মরণীয় আষাঢ় আমাকে এবং আমার স্ত্রী সাবন্তীকে নিয়ে গিয়েছিল শহিদুল ভাই আর রেহনুমা আপার বইয়ে ঠাসা বসার ঘরটাতে। সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী বিদ্রোহের আগুন, মনে লড়াইয়ের দৃপ্ত প্রত্যয়।
সাবন্তী বরাবরই মৃদুভাষী। উচ্চকণ্ঠ হওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ। কিন্তু সেবার বর্ষার অবিশ্রান্ত বর্ষণও তার মনের আগুনকে নেভাতে পারেনি। সে–ও তো একজন মা! এত সন্তানের রক্তস্রোত মায়েদের ঘরে থাকতে দেয়নি। তাই সেদিন যখন শাহবাগে বন্ধু তাজনূভার সঙ্গে সাবন্তী গিয়ে হাজির হয়েছিল পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে প্রতিবাদে শামিল হতে, নিয়তির লিখনে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সামিনা লুৎফা। মঞ্চে ‘খনা’ চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের গল্প এর আগে অনেক শুনেছি। কিন্তু তাঁকে চিনে ওঠার সুযোগ জীবনে জুলাই না এলে হতো কি?
এরই মধ্যে ঝড়ের পাখির মতো বাসায় এসে হাজির হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রনেতা মাসুদ রানা। ঢাকায় তিন–চারবার বাসা পাল্টানো তত দিনে হয়ে গেছে তার। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়ে গেলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে গোটা রাজশাহীর আন্দোলন। জুলাই না এলে মাসুদের কোনো দিন আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠা হতো না। কিন্তু আজ তো মনে হয় ও চিরকাল আমাদেরই একজন।
আরও পড়ুনজুলাই গণ–অভ্যুত্থান: স্বপ্নগুলো বুকপকেটে লুকিয়ে ফেলেছি০৩ জুলাই ২০২৫জুলাইয়ে অনেক পুরোনো মানুষকে নতুন করে চিনেছি। অনেকের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন, গন্তব্যের মিল স্পষ্টতর হয়েছে। এমনকি বিজয়ের পরেও বহু অচেনা সহযোদ্ধাকে চেনার সুযোগ হয়েছে, যারা একই মোক্ষ লাভের জন্য লড়াই করেছেন অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে, এখনো হেঁটে চলেছেন সেই পথে।
বরিশালে গিয়ে দেখা হয়েছে ছাত্রনেতা সুজয়ের সঙ্গে। মাসুদেরও সুজয়ের সঙ্গে দেখা সেই প্রথম। অথচ জুলাইয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে ফোনে, চরম হতাশার মুহূর্তে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায়। আমার সঙ্গে অন্যদের ছবি তোলার আগ্রহ দেখে সুজয় মজা করে বলেছে, ‘জুলাইয়ের পর দুই জিনিসের দাম বেড়েছে, এক তেলের আর দুই আপনার!’ হাসি-আড্ডা আর তপ্ত বিতর্কে মনে হয়নি এই যোগাযোগটা মাত্র কয়েক দিনের। জন্মান্তরের বন্ধন যেন!
অদেখা যে স্বপ্নের দেশের কথা গ্রাফিতিতে বলে গেছে আমাদের সন্তানেরা, তার নাগাল পেতে এখনো হয়তো অনেক বাকি, কিন্তু একা একা স্বপ্ন দেখার চেয়ে কয়েকজন মিলে স্বপ্ন দেখা শ্রেয়তর নয় কি?জুলাইয়ে প্রাণাধিক প্রিয় সুহৃদ যে কেবল আমি আর সাবন্তীই খুঁজে পেয়েছি তা নয়। যাঁরা কালের অমোঘ প্রবাহে জুলাইয়ের মহারণে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই এমন সব মানুষের খোঁজ পেয়েছেন, যাঁদের হাতে হাত রেখে হাসিমুখে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া যায়। আমাদের দৈনন্দিন ছাপোষা জীবনে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু সময়ের সেই সব বাঁকে এই মানুষদের খুঁজে পাওয়া যায়, যখন মহাকাল নতুন করে ইতিহাস লেখে।
আরও পড়ুনজুলাই গণ-অভ্যুত্থান: কোথায় ব্যর্থ, কোথায় সফল০১ জুলাই ২০২৫বর্ষার নবধারাজলে আবার যখন এ দেশের তপ্ত মাটি ভিজে উঠছে, তখন কেটে যাওয়া বছরটার দেনাপাওনার হিসাব মেলাতে বসেছি আমরা। ‘জুলাইয়ে কী করেছি’ রব তোলার পর এখন অনেকে নিভৃতে ‘জুলাইয়ে কী পেলাম’ তার হিসাব কষছেন। কারও কণ্ঠে হতাশার সুর, ‘কী লাভ হলো এত কিছু করে?’ আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার অনেক কিছুই পূরণ হয়নি সত্য। বাস্তবতার নিরিখে অনেক কিছুই হয়তো হওয়ার ছিল না, আবার অনেক কিছু করার সময় হয়তো এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
আমার খেরো খাতায় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এই মানুষগুলো, এই সম্পর্কগুলো। কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে যখন চারপাশের এই মানুষগুলোকে দেখি। এই মানুষগুলো বিজয়ী। তাঁরা জানেন কেমন করে ভয়ের টুঁটি চেপে ধরতে হয়। তাঁরা জানেন কীভাবে নিজ স্বার্থের তোয়াক্কা না করে যা ঠিক তা করে যেতে হয়। দেশের প্রতিটি প্রান্তে সমমনা মানুষগুলোর এই সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে জুলাই। এরাই নতুন বাংলাদেশের আসল কারিগর।
নতুন বাংলাদেশ এক দিনে বা এক বছরে গড়ে উঠবে না। ওঠা সম্ভবও নয়। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় নির্বাচন অপরিহার্য। আগামী বছর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হবে। কিন্তু সে কেবল সূচনা। বহু মত, বহু পথের মানুষের জন্য একটি নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক শান্তির দেশ গড়ার পথ অনেক দীর্ঘ। সে পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেবল সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলের ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। ইতিবাচক সামাজিক শক্তির সংঘবদ্ধ উপস্থিতি ছাড়া এ যাত্রায় পথ হারানোর ভয় পদে পদে।
তাই জুলাইয়ের সবচেয়ে বড় উপহার, মানুষে মানুষে এই আত্মার বন্ধনকে আমাদের কাজে লাগাতেই হবে। শহীদ আবু সাঈদের প্রসারিত বাহু আজ দেশের পথে–প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ডাক একতার, সে ডাক মৈত্রীর।
আবু সাঈদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে প্রাণের বন্ধনে আমরা জড়িয়েছি, তার সুরভি ছড়িয়ে পড়ুক সময়ের সীমানা পেরিয়ে। অদেখা যে স্বপ্নের দেশের কথা গ্রাফিতিতে বলে গেছে আমাদের সন্তানেরা, তার নাগাল পেতে এখনো হয়তো অনেক বাকি, কিন্তু একা একা স্বপ্ন দেখার চেয়ে কয়েকজন মিলে স্বপ্ন দেখা শ্রেয়তর নয় কি?
মানজুর আল মতিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী