কালীগঞ্জে সরকারি হাসপাতালের ২০ গজের মধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার!
Published: 9th, July 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের মাত্র ২০ গজের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ‘হলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের একটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের চোখের সামনে এ ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ বা প্রতিক্রিয়া নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি হাসপাতালের এত কাছাকাছি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক গড়ে উঠলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে দালালচক্রের তৎপরতা, যা জনস্বার্থে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১২ অনুযায়ী, কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালের সীমানার খুব কাছে স্থাপন করা যাবে না, যদি তা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন প্রয়োজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন অফিসের কাছ থেকে।
তবে বাস্তবে সরকারি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। কারণ এতে দালালচক্র, রোগী টানাটানি এবং সরকারি সেবায় বিঘ্ন ঘটে।
হলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো.
তবে সরকারি হাসপাতালের গেটের সামনে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানো বিধিসম্মত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা খোলা যাবে না, এই ধরনের কোনো গেজেটেড আইন নেই। এটি মৌখিক কথা। সিভিল সার্জনের অফিসের সামনেও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এগুলো লুকানোর কিছু নেই। কেউ আইন দেখাতে পারবে না।’’
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএনএফপিও) ডা. রেজওয়ানা রশিদ বলেন, ‘‘গাজীপুরের সিভিল সার্জন মহোদয় হলি কেয়ার ভিজিট করেছেন। স্যার কী বলেন, আগে সেটা জেনে নেই, তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অপরদিকে, গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের গেটের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার কোনোভাবেই হতে পারে না। আমি শুধু ভিজিট করেছি, কিন্তু কোনো অনুমোদনের প্রশ্নই আসে না। এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথেও আমার দেখা হয়নি, আমি শুধু তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছি।’’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটা কোনোভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়। আমি ইউএইচএনএফপিও’কে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।’’
ঢাকা/রফিক/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড য় গনস ট ক স ন ট র স ভ ল স র জন র স মন সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন