গাইবান্ধার সাঘাটায় কলেজছাত্র সিজু মিয়া (২৫) হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টা এই কর্মসূচি পালিত হয়।

‘সচেতন নাগরিক, সাঘাটা, গাইবান্ধা’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাঘাটা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক এনামুল হক সরকার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতিয়ার আহমেদ, উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজেদুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন সাঘাটা উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মনিরুজ্জামান, সমাজকর্মী গোলাম রব্বানী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পুকুরের মধ্যে কলেজছাত্র সিজুর লাশ পাওয়া গেল। সারা রাত তিনি পুকুরের মধ্যে থাকলেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো সারা রাত পাহারা দিয়েছে, যাতে রাতে সিজু পালাতে না পারেন। শুধু তা–ই নয়, পুলিশের নির্দেশে পানির ওপর তাঁকে পেটানো হয়। পুকুরের পানিতে এই পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাঁরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন।

মানববন্ধনে সাঘাটা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক এনামুল হক সরকার বলেন, ‘সিজুকে পুকুরের পানিতে পেটানোর আংশিক ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। মেধাবী ছাত্র সিজুকে বাড়ি থেকে কৌশলে সাঘাটা থানায় ডেকে আনা হয়। তারপর রাতের আঁধারে তাঁকে উত্ত্যক্ত ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে উত্তেজিত করা হয়। এরপর আমরা দেখলাম, তাঁকে পুকুরের পানিতে ওসির নির্দেশে কনস্টেবলসহ সহযোগীরা মারধর ও কুপিয়ে হত্যা করছে। এ সময় সিজু যখন বাঁচার জন্য কিনারায় ওঠার চেষ্টা করছেন, তাঁকে ওঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে।’

সিজু হত্যার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন সাঘাটা উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একাত্তরে যে স্লোগান ছিল, চব্বিশেও সেই স্লোগান ছিল। দেশ ও মানবতার কল্যাণে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা প্রশাসনকে জানাতে চাই, আপনারা ইমানদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।’

উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই সিজু হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা দোষী, তাঁদের সঠিক বিচার হোক। আমরা সচেতন নাগরিক হিসেবে এখানে দাঁড়িয়েছি।’

মানববন্ধনের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর কক্ষে ছিলেন না। সে সময় তিনি গাইবান্ধা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সিজু সাঘাটা থানার কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে যান। সেখানে অভিযোগ লেখার বিষয়ে কম্পিউটার অপারেটরের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি দায়িত্বরত কনস্টেবলের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কনস্টেবলের চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মহসিন মিয়াসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে বন্দুক উদ্ধার করেন। এ সময় তাঁকে ধরার চেষ্টা করা হলে কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে সিজুকে দেখা যায়। পরদিন সকালে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাঁর লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য র ইসল ম তদন ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারী, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিবেশী কয়েকজনের মারধর ও জখমের শিকার হন নীলা রানী (৪৪)। এতে তাঁর চোখের ভ্রুর ওপর পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে, ভেঙে গেছে একটি দাঁত। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের ব্যথায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন ওই নারী।

গত বুধবার মারধরের ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় নীলা রানীর ছেলে বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগী নীলা রানী বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের প্রয়াত অনিত্র চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।

মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলাম (৫৫), শরিফুল ইসলাম (৪০), তরিকুল ইসলাম (৪২) ও মুন্না ইসলাম। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। পরদিন শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নীলা রানী ও আসামিরা পরস্পরের প্রতিবেশী। পূর্বশত্রুতার জেরে ঝগড়া লেগেই থাকে। বুধবার সন্ধ্যায় আসামিরা বাড়ির পাশে মনিপুর মসজিদের সামনে নীলার পথ রোধ করে তাঁকে মারধর করেন। পরে নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলে এনাফ চন্দ্র থানায় অভিযোগ করার উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় দ্বিতীয় দফায় আসামিরা তাঁদের ওপরে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। আসামিদের আঘাতে নীলা রানীর বাঁ চোখের ভ্রুর ওপরে গুরুতর জখম হয়। পরে তাঁকে প্রথমে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে বসে বড় ছেলে হৃদয় চন্দ্র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শেফালী রানীর সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে তাঁর মায়ের ঝগড়া চলছিল। পরে সামান্য বিষয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে শেফালীর কথা–কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ নিয়ে শেফালী রানী বিচার দেন সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামের কাছে। পরে সালিস ডাকেন বাবুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উপস্থিত না থাকায় তাঁরা উপস্থিত হননি। তখন বাবুল তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর জেরে সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের পথ রোধ করেন তাঁরা। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে হামলা করে গুরুতর জখম করেন। তিনি বলেন, পুলিশ আসামি ধরার পর ছাড়া পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত।

বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদ সরকার বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০৭ ধারাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়। আসামির জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ হাসান বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। দ্রুত থানা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। আসামি গ্রেপ্তারও হন। শুনেছেন তিনি পরে জামিন পেয়েছেন। ঘটনা যেহেতু জমিসংক্রান্ত, তাই সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নীলা রানীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ দুপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে বিধান দত্ত, বিপ্লব কুমার সিংহ, উত্তম কুমার, শ্রীকান্ত রায়সহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নীলা রানীর ওপর দেশি অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করা হয়। বর্তমান তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। বর্তমানে নীলার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার কথাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে সম্মান কোর্স চালুর দাবিতে মানববন্ধন
  • ১ কোটি শিশু শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি
  • ১ কোটি শিশু শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে  মানববন্ধন, স্মারকলিপি
  • রাজশাহীতে চাঁদাবাজির মামলার বাদীকেই গ্রেপ্তারের দাবি বিএনপির
  • ডিপিপির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি রবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
  • শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
  • গাইবান্ধায় কলেজছাত্র সিজু হত্যার বিচারের দাবিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও
  • পুলিশের বিরুদ্ধে সিজুকে হত্যার অভিযোগ, এসপির কার্যালয় ঘেরাও
  • হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারী, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন