জাতিসংঘের বেশিরভাগ রিপোর্ট কেউ পড়ে না, স্বীকার জাতিসংঘের
Published: 3rd, August 2025 GMT
জাতিসংঘ বছরে ১ হাজারের বেশি রিপোর্ট প্রকাশ করে। কিন্তু এর বেশিরভাগই পাঠকের অভাবে অব্যবহৃত থাকে- এমন বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ নিজেই। সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ সংস্কারমূলক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য, যা জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ভার ও অকার্যকর ব্যয় ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে। খবর রয়টার্সের।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) প্রকাশিত সংষ্কারমূলক ওই প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর জাতিসংঘে ২৭ হাজার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে অংশ নেয় ২৪০টি সংস্থা ও কমিটি। এ সময়ে ১ হাজার ১০০টি রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার (১ আগস্ট) বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রকে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, “প্রতিবছর তৈরি হওয়া বিপুল সংখ্যক রিপোর্ট ও সভার চাপে জাতিসংঘের কার্যক্রম কার্যত ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।”
আরো পড়ুন:
শুধু প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন নয়, নতুন করে গড়তে হবে দেশ
জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠান
তিনি বলেন, “গত বছর জাতিসংঘে ২৭ হাজার বৈঠক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ১০০টি। এই বিপুল পরিমাণ সভা ও প্রতিবেদন আমাদের সবাইকে এক প্রকার চূড়ান্ত ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
গুতেরেস আরো বলেন, “এসব প্রতিবেদনের বেশিরভাগই খুব একটা পড়া হয় না। মাত্র পাঁচ শতাংশ প্রতিবেদন ৫ হাজার ৫০০ বারের বেশি ডাউনলোড হয়। আবার প্রতি পাঁচটির একটির ডাউনলোড সংখ্যা এক হাজারের নিচে। আর ডাউনলোড মানেই যে কেউ তা পড়ছে, সেটাও নয়।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মতো শীর্ষ সংস্থাগুলো থেকে যে হাজার হাজার নির্দেশনা বা ‘ম্যান্ডেট’ আসে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবছর প্রচুর সভা ও প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়, যা সংস্থাটির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
এছাড়া, জাতিসংঘ এ বছরও তীব্র অর্থসংকটে রয়েছে-গত সাত বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। সদস্য ১৯৩টি দেশের অনেকেই নিয়মিত ও সময়মতো চাঁদা দেয় না, যার ফলে বাজেট ঘাটতি হয় এবং কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
এ অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাব হলো- সভা কমাতে হবে এবং প্রতিবেদনের সংখ্যা কমাতে হব, তবে যেগুলো তৈরি হবে, তা যেন সব ম্যান্ডেট পূরণে সক্ষম হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কিয়েভে আবারো রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা, নিহত ৩১
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারো ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিয়েভে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়ার নতুন হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং আরো ১৫৬ জন আহত হয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার (২ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ৩১ জনের মধ্যে ১৬ শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে। সবচেয়ে কমবয়সি নিহত শিশুটির বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। নিহতদের স্মরণে শনিবার (২ আগস্ট) জাতীয় শোকদিবস পালন করছে ইউক্রেন।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্যোশাল মিডিয়া টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। পাশাপাশি নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানীর পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রুশ বাহিনীর ড্রোন হামলায় খারকিভে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে, যার মধ্যে একজন পাঁচ মাস বয়সী শিশু।
জেলেনস্কির দাবি, রুশ বাহিনীর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাড়িঘর, আবাসিক ভবন, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, চিকিৎসাকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের ১০০টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের আবাসিক এলাকার একটি বড় ৯ তলা ভবনের বিশাল অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবনের ধ্বংস্তূপগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা অনুসন্ধান তৎপরতা চালাচ্ছেন। আমরা এখনো জানি না- কত জন মানুষ এসব ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে কিয়েভে বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশু নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। গত বছরের জুলাইয়ের পর থেকে এটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ, যেখানে ৩৩ জন নিহত হয়েছিল।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে সময় বলেছিলেন, অভিযানে শুধু ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
অভিযানের ৮ মাসের মাথায় ২০২২ সালের অক্টোবরে কিয়েভে হামলা করে রুশ সেনারা। সেটি ছিল ইউক্রেনের রাজধানীতে রাশিয়ার প্রথম হামলা।
শুক্রবারের টেলিগ্রামবার্তায় জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সদ্য বিদায় নেওয়া জুলাই মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে মোট ৫ হাজার ১০০টিরও বেশি গ্লাইড বোমা, ৩ হাজার আট শতাধিখ শাহেদ ড্রোন এবং প্রায় ২৬০টি বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রুশ বাহিনী। নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে ১২৮টি ছিল ব্যালিস্টিক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘ঘৃণ্য’ আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে একই সঙ্গে এটাও বলেছেন যে, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে নিবৃত্ত করবে কিনা তা তিনি নিশ্চিত নন।
ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ৮ আগস্টের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তি করার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন, অন্যথায় মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ